জেল হত্যা দিবস আজ

|

নূরনবী সরকার:

জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য দিন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। কিছু বিপথগামী সামরিক অফিসার বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এই খুনি চক্র আরেকটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডও ঘটায়। বঙ্গবন্ধুর চার সহচর জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করে মোশতাক সরকার। ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে সবচেয়ে সুরক্ষিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়। এই দিনটিকে ‘জেল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরে কেউ থাকলে (দাগী আসামি হলেও) তাকে কিন্তু জীবনের নিরাপত্তা দেয়া হয়। তাদের (চার নেতা) নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, একই ব্যক্তিরা একই উদ্দেশ্যে চার নেতাকেও হত্যা করেছে। তারা হয়তো জানতো না, মানুষকে হত্যা করা যায় কিন্তু আদর্শকে হত্যা করা যায় না।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, হত্যা করার পরে তারা মনে করেছিল, বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের সকলকে খতম করে দেবে। মনে রাখতে হবে– বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানে আওয়ামী লীগ। আবার জাতীয় চার নেতাকে ছাড়া আওয়ামী লীগকে চিন্তা করা যায় না।

স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতির পিতা যখন সবকিছু গড়ে তুলছেন, সেই সময়ে ঘাতকেরা পরিকল্পিতভাবে এই বর্বরতা চালায়। খুনিরা বাংলাদেশের যে ক্ষতি করেছে, তা পূরণে এখন কাজ করছেন জাতির পিতার কন্যা।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এটা আর কোনোদিন রিকভার করা যাবে না। আমরা যে সময়টা পেরিয়ে এসেছি, সেই সময়টা তো আর আসবে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়ন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছেন। তবে আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকলাম। কারণ, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে যারা নেতৃত্ব দিলেন, তাদেরকেই আমরা হত্যা করলাম।

ড. আব্দুল মান্নান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা বাংলাদেশকে কমপক্ষে ত্রিশ-চল্লিশ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। পরবর্তী একুশ বছর কিন্তু বাংলাদেশ পেছনের দিকেই চলেছে। এই দেশ কখনও আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এখন আধুনিক বাংলাদেশকে আমরা দেখছি, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ত্রিশ বছর আগেই আমরা হয়তো এই রূপ দেখতে পারতাম।

খুনিরা দেশের এই খ্যাতিমান চারজনকে হত্যা করলেও তাদের রেখে যাওয়া আদর্শ এখনও পথ দেখাচ্ছে জাতিকে। এই আদর্শই নতুন ষড়যন্ত্রকেও রুখে দেবে বলে আশাবাদী বিশ্লেষকরা।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply