দরিদ্র ও অতিদরিদ্র্যদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রেখেছে সরকার। তাদের জন্য নির্দিষ্ট ‘সমতা’ স্কিমে এরই মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বড় সংখ্যাক মানুষ। এই স্কিমে অংশ নিলেই সরকারের তরফ থেকে দেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হলেও করা হচ্ছে না যাচাই-বাছাই। ইচ্ছা করলেই যে কেউ নিবন্ধন করে, সুবিধা নিতে পারেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্কিম পরিচালনায় সুশাসন নিশ্চিত করা কঠিন হবে। অর্থমন্ত্রণালয় বলছে, প্রথমে সুযোগ দেয়া হলেও পরে যাচাই করা হবে।
উদ্বোধনের পর এক মাসে নিদিষ্ট ‘সমতা’ স্কিমে নিবন্ধন করেছে ১ হাজার ৩৯৫ জন। জমার পরিমাণ ২৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। শুধু দরিদ্র এবং হতদরিদ্র্যদের জন্য এই স্কিম চালু করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। তবে ঠিক কারা এখানে যুক্ত হচ্ছে তা খতিয়ে দেখছে না কেউ। বলা হচ্ছে সক্ষম ব্যক্তিরা এখানে আসতে চাইবে না।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, কেউ হতদ্রিদ্রের ক্যাটাগরিতে নামবেন কিনা, প্রথমে তো আত্মসম্মানের কথা চিন্তা করতে হবে। ৭ বছরে যদি কেউ ১ হাজার করে জমা দেয় তাহলে ১০ বছর পরে সে পাবে ১৫০০ টাকা। কিন্তু যদি ৫ হাজার জমা দেয় তাহলে সে কতো পাবে? তাহলে যার ৫ হাজার টাকা দেয়ার সক্ষমতা আছে, সে কখনও সরকারের ৫০০ টাকা নেয়ার জন্য আসবে বলে মনে হয় না। আমরা এই জন্য এটা ওপেন করে দিয়েছি।
‘সমতা’ স্কিমে যোগ দিতে হলে বাতিল হবে সরকারের অন্যসব সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচীর ভাতা সুবিধা। তবে, এ পর্যন্ত যারা টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের বিষয়ে কোনো যাচাই-বাছাই হয়নি। অর্থাৎ কারা এখানে যোগ দিচ্ছেন, তারা আসলেই দরিদ্র কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না। অর্থমন্ত্রনালয় বলছে, বিনিয়োগ বাড়লে যাচাই করা হবে।
তিনি বলেন, প্রকৃত দরিদ্র ব্যক্তি সমতা স্কিমে এসছে কিনা, যাচাই করার বেশ কিছু সুযোগ আমাদের আছে। সঞ্চয়পত্র এখন অনলাইনে আসছে। তার অ্যাকাউন্ট আমি সার্চ করে দেখতে পারবো যে তিনি সঞ্চয়পত্র রেখেছেন কিনা। যদি থাকে তাহলে বোঝা যাবে, তার আয় ৬০ হাজারের কম না। এছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ দেখা যাবে।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দেয়া একটি হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে কঠিন। কিন্তু যেই যোগ্যতা বা মানদণ্ড বেঁধে দেয়া হচ্ছে, সেগুলো মানা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে না। কারণ আমাদের তো দারিদ্র মানুষের কোনো আপডেটেড ডাটাবেজ নাই।
বলা হচ্ছে, সমতা স্কিম পরিচালনায় সুশাসন নিশ্চিত করা কঠিন হবে। হয়রানি বাড়বে-এমন শঙ্কায়, সমতা স্কিমে যুক্ত হবার ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র দেবার শর্ত দেয়নি অর্থমন্ত্রনালয়।
এটিএম/
Leave a reply