স্টাফ করেসপনডেন্ট, টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইলের শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার বাদী এশা মির্জার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরআগে শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় এশার বোন লুনা মির্জা বাদী হয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেন।
গ্রেফতার ব্যক্তির নাম সৌরভ পাল। তিনি এশা মির্জার সাবেক স্বামী। পুলিশ জানিয়েছে, লুনা মির্জার করা মামলায় আসামি করা হয়েছে এশা মির্জার বড় ভাই জনি মির্জাকেও।
সৌরভ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম মিয়া। বলেন, ভোর রাতে শহরের থানাপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আরেক আসামি জনি পলাতক।
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলাকারী সেই তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
এর আগে গত শনিবার রাতে সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা এলাকার নিজ বাসার ৩য় তলা থেকে এশা মির্জার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
কেন মামলায় জড়ালেন নিজের বড় ভাইয়ের নাম, এমন প্রশ্নে লুনা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করেন। বলেন, তিনি মামলা না করলে দায়ের হতো অপমৃত্যু মামলা। এশার মৃত্যুর পেছনে সাবেক স্বামী সৌরভ এবং ভাই জনি দায়ী বলেও দাবি করেন লুনা।
লুনা জানান, পৈত্রিক সম্পত্তি হওয়ায় একই বাড়ির আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতেন জনি ও এশা। কিন্তু তাদের ভাই এশার ফ্ল্যাট দখলের পায়তারা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিল। বাসা থেকে উৎখাত করতে পানি-বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দিতো। বাসায় আসতে দিতো না কাজের লোক। এমনকি আত্মীয়-স্বজন এলেও বাধা দিতো। এক সপ্তাহ আগে থানায় এশা অভিযোগও দায়ের করেন।
অপর আসামি সৌরভের সাথে এশার ছাড়াছাড়ি হলেও পুরোপুরি সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ছিল না। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে কথা স্বীকারও করে সৌরভ। মামলার বাদী লুনা জানান, বিচ্ছেদের পর এশার সাথে যেমন সম্পর্ক ছিল সৌরভের, তেমনি নানা সময়ে ঝামেলাও হতো।
পুলিশ বলছে, মৃত্যুর আগে ফেসবুকে এশা মির্জার করা একটি পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। তা ধরে তাদের তদন্তও এগুচ্ছে। সেই পোস্টে এশা মৃত্যুর জন্য একজনকে দায়ী করেছেন। বলেছেন, ‘পূজা ও মাকে নিয়ে থাকো। তুমি বেঈমানিই করে গেলা বারবার। তুমি থাকো সবাইকে নিয়ে।’ তবে এটি এশার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় এশা বাদী হয়ে গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ধর্ষণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন এশা। পরে ৬ এপ্রিল দুপুরে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।
মামলা দায়েরের পর বড় মনির উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। পরে নিম্ন আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরে, গত ৩০ জুন টাঙ্গাইল শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন এশা। আদালতের নির্দেশে এশার গর্ভে জন্ম নেয়া সেই শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার প্রতিবেদনে আসে, জন্ম নেয়া শিশুটির পিতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির নন।
পরে আদালত গত ৯ অক্টোবর বড় মনিরকে উচ্চ আদালতের দেয়া জামিনের আদেশ বহাল রাখেন। ধর্ষণের এই মামলাটি টাঙ্গাইলের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিপিআই) তদন্ত করছে।
/এমএইচ
Leave a reply