ঘণ্টা বেজেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনী দৌড়ে লড়তে পুরোদমে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
এরমধ্যে গত মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত কার্যক্রম। এজন্য রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গতকাল ও আজ শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকালও বসবে সভা।
এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন একই পরিবারের একাধিক সদস্য। কোথাও ভাইয়ের প্রতিদ্বন্ধী ভাই কিংবা বোন, কোথাও আবার ছেলে। কোনো আসনে আবার স্বামী-স্ত্রী বা চাচা-ভাতিজাও চান ক্ষমতাসীন দলের চূড়ান্ত সমর্থন।
লালমনিরহাট-২:
লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। গত শনিবার (১৮ নভেম্বর) নুরুজ্জামান আহমেদের পক্ষে তার ছেলে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। পরদিন সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ভাই মাহাবুবজ্জামান আহমেদও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। একইসঙ্গে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদেরও চেয়ারম্যান মাহবুবজ্জামান আহমেদ।
কুমিল্লা-৮:
কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনেও নৌকা চান দুই ভাই। তারা হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ এস এম কামরুল ইসলাম ও বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ এন এম মইনুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আবদুল হাকিমের ছেলে এ দুইজন।
এরমধ্যে ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন কামরুল ইসলাম। তবে পরাজিত হন তিনি। অপরদিকে, মইনুল ইসলাম ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হন।
ঠাকুরগাঁও-২:
এই আসনের আওয়ামী লীগের মনোয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন একই পরিবারের ৪ জন। তার মধ্যে দুইজন হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য মো. দবিরুল ইসলাম ও তার বড় ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজন। দবিরুল ইসলামের মেঝো ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তার ছেলে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম জুয়েলও এই তালিকায় রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁও-২ আসন বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত। দবিরুল ইসলাম ১৯৮৬ সাল থেকে এ আসনে টানা সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমবার তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ১৫ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন।
পাবনা-৪:
বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এই আসনে পরপর পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুর পর ২০২০ সালে উপনির্বাচনে তার পরিবারের একাধিক সদস্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেও পাননি। বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন।
ডিলু পরিবার এ আসনটি আবার ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পরিবারের বড় মেয়ে মাহজেবিন শিরিন পিয়া, দুই ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ, সাকিবুর রহমান শরীফ ও জামাতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার-৩:
সাগরপাড়ের এই আসন নিয়ে তিন ভাই-বোনের মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা দীর্ঘদিন ধরে। সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য ওসমান সরওয়ার আলমের তিন সন্তান কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান।
তাদের মধ্যে সাইমুম সরওয়ার কমল আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য। তার বড় ভাই সোহেল সরওয়ার কাজল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচন করতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি এই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও।
তাদের ছোটবোন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীও নৌকা চান। তিনি কক্সবাজার-৩ আসন ছাড়াও কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন থেকেও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।
কুষ্টিয়া-১:
কুষ্টিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় উপজেলা দৌলতপুর। এই উপজেলা নিয়ে কুষ্টিয়া-১ আসন। এই আসনে নৌকা প্রতীক পেতে লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদের তিন সন্তান। কেউ কোনো ভাইকে ছাড় দিতে নারাজ। তারা হলেন নাজমুল হুদা পটল বিশ্বাস, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ আহমেদ বিশ্বাস এবং দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন বিশ্বাস।
পটুয়াখালী-৪:
সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার পুনরায় আসনটি ফিরে পেতে চান। তাই মনোনয়নের দৌড়ে শামিল হয়েছেন। তার ছোট ভাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান মিলন তালুকদারও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান।
এছাড়া, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার এবারও দলের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তার স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি আশা করছেন এবার তাকে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। এই দম্পতি ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন ফরম দিয়েছেন।
আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও পরিবার প্রভাব ছাড়তে নারাজ এমন অনেক রাজনীতিবিদ। ঢাকা-৭ আসনে নৌকা প্রতীক চান হাজী সেলিমসহ তার দুই পুত্র সুলাইমান সেলিম ও ইরফান সেলিম।
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন স্বামী-স্ত্রী। বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমান মুহিব আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। তার স্ত্রী কলাপাড়া উপজেলা মহিলা লীগের আহবায়ক ফাতেমা আক্তার রেখাও নৌকাপ্রত্যাশী।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নের এই যুদ্ধে বিভিন্ন আসনে পারিবারিক প্রথা ঠিক কতটুকু টিকে থাকবে, তা দেখতে অপেক্ষা করতে হতে পারে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত।
/এমএন
Leave a reply