ক্রিকেট মাঠে চিনিয়েছেন নিজের জাত। বিকেএসপি থেকে নিজের নাম পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বমঞ্চে। তারপর নামেন ব্যবসায়। সেখানেও সফল। এর ফাঁকে তো মডেলিং রয়েছেই। দেশের বিজ্ঞাপন বাজারেও তার চাহিদা শীর্ষে। তবে বিতর্কও পিছু ছাড়েনি তাকে। পাঠক নিশ্চয় পরিষ্কার, বলা হচ্ছে সাকিব আল হাসানের কথা।
মাগুরার সাহাপাড়ার সাকিব এরমাঝেই একদিন ইচ্ছা পোষণ করলেন রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার। নির্বাচন করতে চান নৌকা প্রতীকে। যেতে চান সংসদে। কিন্তু প্রথমবারেই হোঁচট খেলেন কিছুটা। অবশ্য তা ভেঙে পড়ার মতো কিছু না। ২০১৮ সালের এ গল্প তো সবার জানা।
সাকিব আল হাসানকে তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলে দেন, সামনে বিশ্বকাপ (২০১৯) আছে, তাই নির্বাচন না করে খেলায় মনোযোগ দিতে। সে সময় শোনা যায়, পরবর্তী নির্বাচনেই তার কথা মাথায় রাখবে দল।
সাকিব তার নেত্রীর কথা রাখেন। ভোট কিংবা রাজনীতির পথে আগাননি। চালিয়ে যান ক্রিকেট। কিন্তু তার পরের অধ্যায়ে সাকিবের নামের পাশে ক্রিকেটের চেয়ে ঢের বিতর্কই যুক্ত হয়েছে বেশি।
আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে নির্বাচন। চব্বিশের ভোটে লড়তে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন সাকিব। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন চেয়ে তিন আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দেন এই ক্রিকেটার। আসনগুলো হচ্ছে মাগুরা-১, মাগুরা-২ ও ঢাকা-১০। শেষ পর্যন্ত মাগুরা-১ এ নৌকার টিকিট পেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই পোস্টার বয়।
গত মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) এসব আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান সাকিব। দুইদিন পর আবার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান তিনি। এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো বৈঠক করেন।
সাকিবের রাজনীতিতে যোগ দেয়ার বিষয়ে পরদিন শুক্রবার ওবায়দুল কাদের বলেন, সাকিব এখন থেকে রাজনীতি করবে, সে দলকে তা বলেছে।
তাতে রাজনৈতিক বোদ্ধারা পরিষ্কার হন, সাকিব এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। তবে, প্রশ্ন তখনও শেষ হয়নি! শেষ পর্যন্ত কোন আসনে লড়ার সুযোগ পাবেন ক্রিকেট মাঠের এই অলরাউন্ডার? এ নিয়ে তো বাহাস চলেই।
কেননা, মাগুরা-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগেরই সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামানও মাগুরা-২ আসনের সাবেক সদস্য ছিলেন। বোন কামরুল লায়লা জলিও জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য। তাছাড়া, সাইফুজ্জামান শিখর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
সাকিবের বাড়িও এই আসনে। ২০১৮ সালে সাকিব এই আসন থেকেই নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতিরই মানুষ শিখরকে হটাতে পারবেন নবাগত সাকিব, সে প্রশ্ন মাগুরার পাশাপাশি ছিল সারাদেশে।
শেষ পর্যন্ত নবাগত সাকিবের ঘূর্ণিতে কাটা পড়লেন সাইফুজ্জামান শিখর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হলো আজ রোববার (২৬ নভেম্বর)। মাগুরা-১ আসনের পাশে লেখা আছে সাকিব আল হাসানের নাম। মাগুরা পৌরসভা, সদর উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন। আর সদরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে নবগঙ্গা নদী। সেই নদীর তীরেই নৌকার হাল ধরতে সাকিবকে মনোনীত করলো আওয়ামী লীগ।
রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দলটি। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আপাতত প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এই দুই আসনে পরে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমান।
/এমএন
Leave a reply