গরুর মাংসের দাম কমার নেপথ্যে কে? ঘটনাই বা কী

|

আশিক মাহমুদ:

হঠাৎ টালমাটাল গরুর মাংসের বাজার। ভেঙে পড়েছে সিন্ডিকেট। কেজিতে দাম কমেছে কমপক্ষে একশ’ টাকা। আর এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গার নেপথ্যের কারিগর খলিল নামের একজন মাংস ব্যবসায়ী। তিনিই প্রথম রাজধানীতে ৫৯৫ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করে উল্টেপাল্টে দেন সবকিছু। ফলে, গত ছয় মাসেও যারা দোকানে যাননি তারাও এখন নিচ্ছেন মাংসের স্বাদ।

গত দুই বছর ধরে গরুর মাংসের দাম সাড়ে সাতশ’ টাকার নিচে নামেনি। কখনও কখনও ৮০০ টাকায় গিয়েও ঠেকেছিল দাম। ফলে গরুর মাংস খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। বিভিন্ন সংস্থার হিসাব বলছে, গত এক বছরে মাংস ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

আর এমন পরিস্থিতিতে গত মাসে হঠাৎ করেই ঘোষণা দিয়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৯৫ টাকায় বিক্রি শুরু করে রাজধানী খিলগাঁও এলাকার মাংস ব্যবসায়ী খলিল। এমন খবরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ক্রেতারা। তখন থেকে ৫৯৫ টাকা কেজিতেই গরুর মাংস বিক্রি করছেন তিনি।

খলিলের দোকানে মাংস কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, আগে তো ৮০০ টাকা কেজি ছিল। এখানে আমরা ৫৯৫ টাকায় পাচ্ছি, এটা তো আমাদের জন্য ভালো। একটু কমে পেলে তো আমরা সবাই খেতে পারি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু খলিল ৫৯৫ টাকায় বিক্রি করছে সেহেতু সে তো লসে বিক্রি করছে না। লাভেই বিক্রি করছে। তাহলে সে পারলে অন্য ব্যবসায়ীরা কীজন্য পারবে না।

তার দেখাদেখি রাজধানীর আরও কিছু ব্যবসায়ী ৬০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি শুরু করে। আর এতেই উল্টেপাল্টে যায় বাজার। ভেঙ্গে পড়ে সিন্ডিকেট।

সম্প্রতি মাংস ব্যবসায়ীরা নিজেরা নিজেরা বৈঠক করে সাড়ে ছয়শ’ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপরও খলিল সেই ৫৯৫ টাকা কেজিতেই বিক্রি করছে গরুর মাংস।

এখন প্রশ্ন উঠেছে খলিল পারলেও অন্যরা কেন পাড়ছে না? তাহলে কি খলিল লাভ ছাড়া লসে বিক্রি করছে? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খলিলের মুখোমুখি হয় যমুনা টেলিভিশন। খলিল জানান, আগের চেয়ে কিছুটা কম লাভে মাংস বিক্রি করছেন তিনি।

এছাড়া, কম দামে ক্রেতাকে মাংস খাওয়াতে গিয়ে এরইমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের রোষানলেও পড়েছেন খলিল।

খলিল মাংস বিতানের মালিক খলিলুর রহমান বলেন, শুক্রবার আমি ২৫টা গরু বিক্রি করেছি। পুরোটা হিসেব করে দেখেছি আমার লস হয় নায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে গরুর মাংস কিনে খেতে পারছে সেটা দেখেই ভালো লাগছে।

অনেক জায়গা থেকে চাপ আসছে জানিয়ে খলিল জানান, তারা আমার ভাই। তাদের নাম বলতে চাই না। তবে আমি নিজের মতো করে তাদেরকে ম্যানেজ করছি।

এই ব্যবসায়ীর কথাতেই এটা পরিষ্কার যে, এতদিন সিন্ডিকেটের কারণে লাগামহীন ছিলো মাংসের বাজার। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, তাদের সব সুপারিশ মেনে যদি সরকার কার্যকর করে তাহলে ৫০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করা সম্ভব হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা যদি খলিলের কেস টা স্টাডি করি তাহলে বুঝা যায় যে, কেউ যদি সিন্ডিকেটের থেকে বের হয়ে আসে তখন কিন্তু আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। খলিলের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ নিয়ে আমরা গোয়েন্দাদের সাথে কাজ করছি। আমরা এই চক্র যাতে আগের খেলায় না নামতে পারে আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখছি।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply