বর্তমান সংকটে বুদ্ধিজীবীরা কতটা দায়িত্বশীল?

|

রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা (বায়ে) ও সিরাজুল ইসলাম খান (ডানে)।

আলমগীর স্বপন:

শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ‘মুক্ত’ ও ‘গণতান্ত্রিক’ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর। ঠিকানা ভুল থাকায় একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরে নিজেও বেঁচে গিয়েছিলেন বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী আলবদর ও পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে।

তার মতে, সংকটকালে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারছেন না বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই। দেশের তুলনায় ব্যক্তি স্বার্থরক্ষায় তারা ব্যস্ত।

যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে আত্মসমর্পণের আগে তালিকা করে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়নে নেমেছিল পাকস্তানি হানাদার বাহিনী। জঘন্য এই হত্যাকাণ্ডে দেশ অর্জনের বিজয়ের সুবাস গায়ে মাখতে পারেননি জাতীর সুর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই।

এ দেশে পাক হানাদারদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় বেছে বেছে হত্যা করা হয় অধ্যাপক, লেখক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের। সেই তালিকায় ছিলেন শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নামও। জানালেন কীভাবে তিনি বেঁচে গেছেন।

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাও ফরমান আলীর (পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর জেনারেল) ডায়েরিতে নাম পাওয়া গেছে। অনেকের নাম তাতে ছিল, কিন্তু ঠিকানা জানা ছিল না। যেমন আমার নিজের নামও ডায়েরিতে পাওয়া গেছে। ঠিকানা জানা ছিল না বলে আমি বেঁচে গেছি। বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাটা ওরা পছন্দ করে নাই। ওরা মনে করতো, এই যে আন্দোলনটা হচ্ছে, সংগ্রাম হচ্ছে, এর পেছনে অন্য মানুষ আছে, বুদ্ধিজীবীরা আছে। তারাই বুদ্ধি জোগায়, তারাই লেখে, তারাই বক্তৃতা করে। কাজেই আগে থেকে তাদের রাগটা ছিল।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, যে মুক্তির জন্য বুদ্ধিজীবীদের আত্মাহুতি, সেই গণতান্ত্রিক ও মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং উল্টোপথে হাঁটছে দেশ।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বুদ্ধিজীবীরা প্রকৃত শ্রদ্ধা পাবেন, যদি ওই যে নতুন বাংলাদেশ ও গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন, তা যদি প্রতিষ্ঠা করা যায়। তা প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামটা কিন্তু আমরা করছি না। ওইটা দুঃখজনক। তারা (বুদ্ধিজীবী) মনে করতেন, দেশ স্বাধীন হলে মানুষ মুক্ত হবে। সেই মুক্তি আসবে সমাজে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে।

এক্ষেত্রে বর্তমান বুদ্ধিজীবীদের অনেকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে এই শিক্ষাবিদের। বললেন, বুদ্ধিজীবীরা ভাগ হয়ে গেছেন। দলীয় আনুগত্যে চলে গেছেন। প্রত্যেকে নিজের কথা ভাবছেন। আমি ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করলে আমি কিন্তু বুদ্ধিজীবী থাকি না। আমি লিখছি, বক্তৃতা করছি, আমার উদ্দেশ্যটা কী? আমাদের উদ্দেশ্য নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা নয়। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজকে বদল করা।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, এখন সমষ্টিগত আন্দোলন নেই। তাই ব্যক্তি স্বার্থ ছাড়াও বুদ্ধিজীবীদের অনেকে চুপ থাকছেন বিপদের ভয়ে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply