তৌহিদ হোসেন:
একদিকে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের উল্লাস। অন্যদিকে, অবকাঠামো নিয়ে খাঁদের কিনারায় বাংলাদেশ। নয় মাসের যুদ্ধ শেষে তখন দেশে এক অরাজক অবস্থা। নদীমাতৃক বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩শ’ সেতু।
বাহাত্তরের জানুয়ারি নাগাদ ১৯৪টি রেল ব্রিজ মেরামত করা হলেও ভেঙে পড়ে যোগাযোগব্যবস্থা। মূল রফতানি পণ্য পাট ও চা পরিবহনে বিপত্তি বাধে সবচেয়ে বেশি। ধারণা করা হয়, হানাদারদের সাথে যুদ্ধের কারণে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয় এ ভূখন্ডে, যা তখনকার জিডিপির ৩০ শতাংশ। আর বিজয়ের ৫৩ বছরে এসে এখন স্পষ্ট, অবকাঠামো খাতে তাক লাগিয়েছে বাংলাদেশ।
গত ৫২ বছরে একের পর এক সড়ক তৈরি হয়েছে। যোগাযোগে চালু হয়েছে সব মেগা স্ট্রাকচার। প্রান্তিকেও পৌঁছেছে যোগাযোগব্যবস্থার সুফল। খরস্রোতা পদ্মাকে বশ মানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গৌরবের পদ্মা সেতু। পশ্চিমাদের আদলে এখন বালুর মাটির দেশেও চলছে মেট্রোরেল। বন্দরনগরীর দুই প্রান্তকে যুক্ত করেছে কর্ণফুলী টানেল। রেল পৌঁছে গেছে কক্সবাজারে।
আর দুই দশক আগে থেকেই ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা রিজিওনাল হাইওয়ের সাথে পরিচিত এখানকার মানুষ। সামনে অবকাঠামোকে ঘিরে নতুন অনেক মেগা প্রকল্পের আভাস।
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, দেশের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক অবস্থানে না যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, যেসব মেগাপ্রকল্প নেয়া হয়েছিল, তার জন্য যে ব্যয় এবং অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতি শক্তি অর্জন করেছে।
১৯৭০ সালে দেশে পাকা সড়ক ছিল মাত্র ৩ হাজার ৮৮০ কিলোমিটার। ৫৩ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটারে। মূলত ৮০’র দশক থেকেই সড়কে যোগাযোগ বাড়তে থাকে। গত এক দশকে এই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। ফোর লেন, সিক্স লেন ছাপিয়ে এখন বাস র্যাপিড ট্রানজিট, ক্রস বর্ডার নেটওয়ার্ক কিংবা স্মার্ট হাইওয়ের সাথে পরিচিত হচ্ছে মানুষ। তবে এখনো বাড়তি খরচে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে হতাশা আছে বিশ্লেষকদের।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, প্রায় ১০ বছর খেটে কি করতে চেয়েছিলাম, কি পেরেছি আর পারি নাই— এই মূল্যায়নটা করে পরিকল্পনা কমিশনকে পরিকল্পনাবিদ দিয়ে সাজাতে না পারি, তাহলে সুযোগ সন্ধানীদের বড় বড় মাপের বিলাসী প্রকল্প হবে। কিন্তু বাস্তবায়নের পরে দেখা যাবে, সমন্বয় না হওয়ার কারণে এই প্রকল্পগুলো যে উপযোগিতা তৈরি করার কথা, সেটা করতে পারবে না।
অবকাঠামো কি উন্নয়নের প্রতীক নাকি উন্নয়নের ফল, এমন নানা প্রশ্নে সরগরম চায়ের আড্ডা। তবে, মেগা স্ট্রাকচারের বেশিরভাগই এখন শহরকেন্দ্রিক। আবার শিক্ষা কিংবা স্বাস্থ্যে যেখানে মানোন্নয়নই বড় কথা, সেখানে নতুন কাঠামো কতটা জরুরি, সে বিতর্কও থামছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, এই অবকাঠামো ব্যবহার করে আমরা কতটা মানবসম্পদ গড়ে তুলছি, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে এটাকে কতটা কাজে লাগাতে পারছি। যেমন পদ্মা সেতু হয়েছে, এটা কেবল ব্রিজ না, ব্রিজ প্লাস।
এদিকে, সরকার আপাতত নতুন মেগা স্ট্রাকচার নয়, চলমান বড় প্রকল্পের সুফল নিশ্চিত করতে চায়।
/এমএন
Leave a reply