বিশ্বফুটবলের অন্যতম জনপ্রিয় মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার ত্রয়ী ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ‘এমএসএন’ শব্দটা শুনলেই মনে পরে বার্সেলোনার সোনালি অতীতের কথা। একসঙ্গে দলে তাদের উপস্থিতি আতঙ্ক বাড়িয়ে কাঁপুনি লাগিয়ে দিতো প্রতিপক্ষ শিবিরে। প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে দিতে হতো মুহুমুর্হু পরীক্ষা।
একসঙ্গে এই ত্রয়ী জিতেছেন লিগ, ক্লাব ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাও। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার হয়ে এই ‘এমএসএন’ ত্রয়ী গোল করেছিলেন ৩৬৪টি। তিনজন মিলে অ্যাসিস্ট করেন বার্সার ১৭৪ গোলে।
তবে এই ত্রয়ী ভেঙে যায় ২০১৭ সালে। ২২২ মিলিয়ন ইউরো রেকর্ড মূল্যে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে যোগ দেন নেইমার। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে ইউরোপে পাড়ি দিয়েছিলেন, সেই ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেননি তিনি।
নেইমারের বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেয়ার বিষয়ে এবার মুখ খুলেছেন সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ। বললেন, তারা খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। বার্সাকে গ্রেট বানাতে তারা দুর্দান্ত খেলছিলেন বলেও স্মরণ করেন তিনি। পরক্ষণেই বলেন, আমি ও মেসি দুজনেই নেইমারকে পিএসজিতে যোগ দেয়ার মতো ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছিলাম।
বার্সায় অতীত ইতিহাস স্মরণ করে সুয়ারেজ আরও বলেন, তাদের মধ্যে একজন ভালো না খেললে অন্য দুজন ঠিকই পার্থক্য গড়ে দিতো। এটা এক ধরনের মিরাকেল ছিল। প্রতিনিয়তই তারা এভাবেই ভেঙে দিতেন প্রতিপক্ষের রক্ষণ।
সে সময় এক ধরনের কথাবার্তা রটে যে, মেসির ছায়া থেকে না বের হলে বিশ্বসেরা হতে পারবেন না নেইমার। কিন্তু এ ধরনের কথার সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছেন সুয়ারেজ। নেইমারের পিএসজিতে যাওয়া ভুল সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সুয়ারেজ নেইমারকে বলেছিলেন, নেই (ডাকনাম) তুমি যদি সেরা হতে চাও তাহলে লিওর পাশে থাকতে হবে।
কিন্তু নেইমার তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করায় দলে তৈরি হয়েছিল এক ধরনের শূন্যতা। যা আর পরবর্তীতে পূরণ করা সম্ভব হয়নি বার্সেলোনার পক্ষে।
ফুটবলে ধূমকেতুর মতো আগমন হওয়া নেইমারকে ভাবা হতো ব্রাজিলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। শতাব্দীর অন্যতম সেরা প্রতিভা হিসেবে নিজের জাত চিনিয়ে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোস থেকে যোগ দিয়েছিলেন বার্সেলোনায়। কিন্তু ক্যারিয়ারের বসন্তে নিজেই করেছেন অবহেলা। পিএসজিতে যোগ দিয়ে দারুণ অপচয়ে হারিয়েছে নিজের সেরা সময় ও প্রতিভা। কোটি মানুষের সমর্থন, পণ্ডিতদের প্রশংসাবাক্য আর ফুটবলের প্রতি অনন্ত ভালোবাসার সাথে হারিয়েছেন তার জৌলুস।
পিএসজিতে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতানোর লক্ষে প্যারিসে গেলেও বারবার ব্যর্থ হয়েছেন নেইমার। ছয় মৌসুমে একবার উঠতে পেরেছেন ফাইনালে। একবার খেলেছেন সেমিফাইনাল। বাকি চারবার ছিটকে গেছেন শেষ ষোলো থেকে।
চোটে জর্জরিত নেইমার প্রতি মৌসুমে গড়ে খেলেছেন ৩০টিরও কম ম্যাচ। ছয় মৌসুমে যেখানে তার ৩০০ এর বেশি ম্যাচ খেলার কথা সেখানে তিনি খেলেছিলেন মাত্র ১৭৩টি ম্যাচ।
পিএসজিতে ব্যর্থ নেইমার ৩১ বছর বয়সে এসে যোগ দিয়েছেন সৌদি প্রো লিগের আল হিলাল ক্লাবে। সেখানেও বর্তমানে ইনজুরিতে মাঠের বাইরে আছেন তিনি।
তবে নেইমার বার্সা ছাড়ার পরে মেসি ও সুয়ারেজ জুটি মোট ৭৬টি গোল করলেও বার্সাকে জেতাতে পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। এমনকি যেতে পারেনি ফাইনালেও। উল্টো নেইমারকে ছেড়ে অর্থের ঝনঝনানিতে বেপরোয়া খরচ করা বার্সা উল্টো হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত।
নেইমারের প্রস্থানের পর দুই বছরে উসমান ডেম্বেলে, ফিলিপে কৌতিনহো ও গ্রিজম্যানকে সাইন করাতে গিয়ে খরচ করেছে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ইউরো। ফলে ২০২১ সালে এসে মেসির সাথে চুক্তি নবায়নে ব্যর্থ হয় বার্সা। ফলে ‘বন্ধু’ নেইমারের টানে মেসিও যোগ দেন পিএসজিতে।
/এমএইচ
Leave a reply