দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনে আগে ব্যাট করতে নেমে সৌম্য সরকারের রেকর্ড গড়া ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংসের পরেও বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ১ বল বাকি থাকতেই ২৯১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে হেনরি নিকোলস, উইল ইয়াংয়ের ব্যাটে চড়ে হেসেখেলে ৭ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নেয় স্বাগতিকরা।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) নেলসনে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন কিউই অধিনায়ক টম লাথাম। ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই অ্যাডাম মিলনেকে মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে রানের খাতা খোলেন সৌম্য। অবশ্য বেশিদূর এগোতে পারেননি আরেক ওপেনার আনামুল হক বিজয়। এই ওপেনার মিলনের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে এজ হয়ে স্লিপে লাথামের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ২ রানে।
বিজয়ের বিদায়ের পর উইকেটে এসেই দারুণ শুরু করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মিলনের লেন্থ ডেলিভারিতে মিড অফ দিয়ে চার মেরে রানের খাতায় নাম তোলেন টাইগার অধিনায়ক। তবে তিনিও থিতু হতে পারেননি। জ্যাকব ডাফির করা লেন্থ ডেলিভারিতে কাভার পয়েন্ট দিয়ে খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে আউট হন ৬ রান করে।
এরপর ব্যর্থ হন লিটন দাসও। ডাফির আগের বলেই ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মারেন এই ডানহাতি ব্যাটার। পরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে সোজা উইল ইয়াংয়ের হাতে ক্যাচ দেন। ফলে মাত্র ৬ রান করে আউট হতে হয় তাকে। মাত্র ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
চতুর্থ উইকেটে তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন সৌম্য। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হলে ভাঙে এই জুটি। ক্লার্কসনের স্ট্রেইট ড্রাইভ করেছিলেন সৌম্য। ব্যাটে-বলে ঠিক মতো না হলে বোলারের হাতে লেগে স্টাম্প ভেঙে যায়। রান নেয়ার জন্য নন স্ট্রাইকে থাকা হৃদয় বেশ খানিকটা এগিয়ে এসেছিলেন। ফলে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় তাকে।
উইলিয়াম ও’রর্কের করা প্রথম ওভারেই চড়াও হন সৌম্য। ওভারের দ্বিতীয় বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে শুরু। পরের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে আরেকটি চার। ওভারের শেষ বলে পয়েন্ট দিয়ে আরেকটি চার মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন সৌম্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাট হাতে আরও বেশি সাবলীল হন বাঁহাতি এই ব্যাটার। হাফ সেঞ্চুরি পেতে বাঁহাতি এই ব্যাটার খেলেছেন ৫৮ বল।
ক্লার্কসনকে পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছান সৌম্য। অবশ্য এক বল পরেই কাভারে রাচিন রবীন্দ্র হাতে জীবন পান তিনি। সেই ওভারের পঞ্চম বলে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে তাকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার শন হেগ। অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন সৌম্য। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় প্যাডে বল লাগার আগে ব্যাটে লেগেছিল বল। ফলে সে যাত্রায় বেঁচে যান সৌম্য।
পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন সৌম্য ও মুশফিকুর রহিম। দু’জনেই দেখে শুনে ভালোই এগোচ্ছিলেন। এই দু’জনের ৯১ রানের জুটি ভাঙেন কিউই পেসার ডাফি। কিউই এই পেসারের অফ কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে এজ হয়ে উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৪৫ রান করা মুশফিক।
হাফ সেঞ্চুরির পর দুইবার জীবন পাওয়া সৌম্যকে ব্যক্তিগত ৯২ রানে তাকে আবারও জীবন দেন ইয়াং। ও’রর্কের করা স্লোয়ার ডেলিভারিতে করা বল সৌম্যর ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ উঠে গিয়েছিল কাভার পয়েন্টে। সেখানে সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি ইয়াং। ফলে আবারও জীবন পান সৌম্য। এরপর সেঞ্চুরি তুলে নিতে বেশিক্ষণ লাগেনি তার। ১১৬ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য।
কিউই স্পিনার আদি অশোকের বলে অফ সাইডে সিঙ্গেল নিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারে পৌঁছান সৌম্য। দীর্ঘদিন পর এমন এক ইনিংস খেলে সৌম্য যেন কিছুটা হাফ ছেড়েই বাঁচলেন। খানিকটা উঁচুতে লাফিয়ে নিজের সেঞ্চুরির উদযাপন করলেন। ব্যাটের ওপর হেলমেট ধরে ধ্যানের ভঙ্গিমায় সেঞ্চুরির উদযাপন সারলেন। সৌম্যর ব্যাট থেকে সর্বশেষ সেঞ্চুরি এসেছিল ২০১৮ সালের অক্টোবরে।
এরপর দ্রুত বেশ কয়েকটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিরাজকে ব্যক্তিগত ১৯ রানে ফিরিয়ে অভিষেক ম্যাচে উইকেটের দেখা পান কিউই স্পিনার অশোক। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে কাট করতে গিয়ে মিরাজ সোজা ক্যাচ দিয়েছেন ইয়াংয়ের হাতে। এর ফলে সৌম্য ও মিরাজের জুটি থামে ৬১ রানে।
এরপর তানজিম সাকিবকে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস টেনে নেন সৌম্য। শতকের পর দারুণ সব শটে এগিয়ে যান সৌম্য। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর ১২৮ ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসের পর তিনি গড়েন আরেকটি রেকর্ড- শচীন টেন্ডুলকারের ১৬৩ ছাড়িয়ে নিউজিল্যান্ডে উপমহাদেশের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ইনিংস।
ইনিংসের শেষদিকে সাকিব ফেরেন ১৩ রান করে ক্লার্কসনের শিকার হয়ে। সৌম্যর ১৬৯ রানের ইনিংস থামান ও’রর্ক। কাভারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে হেনরি নিকোলসের হাতে ধরা পড়েছেন সৌম্য। এরপর রিশাদ ও হাসান মাহমুদকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে দেন এই কিউই পেসার। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নেন জ্যাকব ডাফি ও উইলিয়াম ও’রর্ক।
২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকদের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রাচিন রবীন্দ্র। ৩৩ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৪৫ রান করা রাচিনকে ফেরান হাসান মাহমুদ, দারুণ এক ক্যাচ নেন রিশাদ হোসেন। এরপর ১২৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন উইল ইয়াং ও হেনরি নিকোলস। ৯৪ বলে ৮ চার ও ২ ছয়ে ৮৯ রান করে হাসান মাহমুদের বলে তাকেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইয়াং।
সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন নিকোলসও। ৯৯ বলে ৮ চার ও ১ ছয়ে ৯৫ রান করে শরিফুল ইসলামের বলে রিশাদকে ক্যাচ দেন নিকোলস। টম ল্যাথাম (৩২ বলে ৩৪*) ও টম ব্লান্ডেল (২০ বলে ২৪*) বাকিটা পথ অনায়াসে পাড়ি দেন। ২২ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় স্বাগতিকরা, সাথে নিশ্চিত করে সিরিজ জয়ও। আগামী শনিবার নেপিয়ারে হবে শেষ ম্যাচ, বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর।
/আরআইএম
Leave a reply