আলমগীর স্বপন:
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কোন দল জয়ী হবে, উত্তরটা অনেকটা সহজ। তবে কারা বিরোধীদলের আসনে বসবে, সে বিষয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। এছাড়াও আসন্ন নির্বাচনে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ও হতে পারে বড় ফ্যাক্টর।
তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই যেহেতু স্বতন্ত্র প্রার্থী, তাই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। তবে অনিশ্চয়তার খেলা নির্বাচনে কারা জয়ী হবে, সেটা আগ থেকেই অনুমান করা গেলে ভোটারদের আগ্রহ কমে যাবে বলেও জানান তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, এইবার নানা কায়দায় প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ কিছু এসেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর, কিছু ডামি প্রার্থীর; আর কিছু নতুন করে তৈরি করা হয়েছে কিংস পার্টির নামে। ফলে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়লেও ভোটারের সংখ্যা বাড়বে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় আছে।
৭ তারিখের পরীক্ষায় কারা উত্তীর্ণ হবে, সে প্রশ্নে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুইটি প্রধান ব্র্যান্ড। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। এখন বিএনপি না থাকলে কে জিতবে, সেটা সবারই জানা। আর এজন্যই সিট ভাগাভাগি হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চাইলে সবগুলোতেই জিততে পারে। এখন সিট ভাগাভাগি করে হয়তো তারা বিরোধী দলের খোঁজ করছে।
তবে তার এমন মন্তব্যের সাথে একমত হতে পারেননি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ৩০০ আসনের ৩০০ আসনেই তো সমঝোতা হয়নি। জাতীয় পার্টির সাথে হয়েছে ২৬ আসনে আর ১৪ দলের সাথে হয়েছে ৬টি আসনে। এছাড়াও যে আসনগুলো আছে, সেখানে অনেক প্রভাবশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়ে গেছে। কাজেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
তবে বিরোধীদের অসহযোগ আন্দোলন ও ভোট প্রতিহত করার ঘোষণায় দুশ্চিন্তা রয়েছে বিভিন্ন মহলে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের কাছে নির্বাচন গ্রহনযোগ্য করার চ্যালেঞ্জও রয়েছে সরকারের সামনে।
এমতাবস্থায় ভবিষ্যতের রাজনীতি ও অর্থনীতি কোন পথে এগোচ্ছে, সে বিষয়ে ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আমেরিকা অথবা অন্যান্য দেশগুলো যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেরকম নিষেধাজ্ঞা দিলে বাংলাদেশের জন্য খুব বড় বিপদ হতে পারে।
একই কথা বলছেন ড. বদিউল আলম মজুমদারও। তিনি আসন্ন নির্বাচনকে সরকারি দলের জন্য কাল হতে পারে জানিয়ে বলেন, মানুষ দুই-দুইবার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আবারও যদি বঞ্চিত হয়, তাহলে জনরোষ বাড়তে পারে।
তবে হারুন অর রশীদ বলছেন, নির্বাচন ভণ্ডুল করা সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা। বলেন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে সেনাবাহিনী থাকবে। ট্রেনে আগুন, বাসে আগুন দিয়ে নির্বাচন পণ্ড করা সম্ভব নয়। সেটা হলে তারা ২৮ তারিখেই কিছু করতে পারতো।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হবে, এটা ধরে নেয়া যায়। কারণ, বিএনপি মাঠে নাই। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি অথবা স্বতন্ত্র থেকেই আসবে বিরোধী দল। তবে কারা হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ বলছেন নির্বাচন পিছিয়ে দিতে। সংকট নিরসনে এর বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তারা। তবে নির্বাচন পেছানোর আর কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছেন বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা।
/এমএইচ
Leave a reply