সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮ এর নয়টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদ যেসব উদ্বেগ ও দাবি জানিয়েছে সেসব বিষয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনার জন্য তোলা হবে বলে আশ্বস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এসময় উপস্থিত ছিলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
আইনমন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা করার পর আবারও তারা সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বসবেন এবং আলোচনা করে তা নিরসনের উদ্যোগ নেবে।
রোববার সচিবালয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে সরকারের প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্ত জানান আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সম্পাদক পরিষদ আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আপত্তির জানিয়েছেন। যেহেতু আইনটি সংসদের পাস হয়ে গেছে, তাই এখন সম্পাদক পরিষদের আপত্তি ও বক্তব্যগুলোকে মন্ত্রিসভায় তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, আগামী ৩ অক্টোবরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে হয়তো তুলে ধরা হবে না। কারণ অনেকগুলো এজেন্ডা আছে। পরের সভায় তুলে ধরা হবে। তারপর মন্ত্রিসভা যে কার্যপরিধি ঠিক করে দেবে, সেই অনুযায়ী আলোচনায় বসার জন্য তারা সম্মত হয়েছেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হয়েছে, সেখানে অনেক এজেন্ডা আছে, হয়ত সেখানে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে না। এর পরে যে কেবিনেট মিটিং হবে সেখানে এটাকে আমি উপস্থাপন করব। এডিটরস কাউন্সিলের যে আপত্তিগুলো তা তুলে ধরব। আলোচনা করার জন্য যে টার্মস অব রেফারেন্স দেয়া হবে সে অনুসারে আমরা আবার আলোচনায় বসার জন্য সম্মত হয়েছি।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করতে পারবেন বলে তারা মনে করেন।
সম্পাদক পরিষদও আশা প্রকাশ করে বলেছে, তারাও মনে করে আলোচনার মাধ্যমে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হয়। এখন রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এটি আইনে পরিণত হবে।
সম্পাদক পরিষদ এই আইনের অন্তত নয়টি ধারা নিয়ে আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এই আইন বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল কবীর, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান, ইনডিপেনডেন্টের শামসুর রহমান, বণিক বার্তার দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, সমকালের মুস্তাফিজ শফি প্রমূখ।
আলোচনার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে মাহফুজ আনাম বলেন, তারা মনে করেন, যে আইনটি সংসদে পাস হয়েছে সেটা সংবিধানে বাক ও গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তার লঙ্ঘন করবে। এটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও গণতন্ত্রেরও পরিপন্থী। ওনারা আশ্বাস দিয়েছেন, আলোচনা করে সমঝোতায় আসতে পারবেন।
এর আগে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর আইনটির প্রতিবাদে মানববন্ধনের কর্মসূচি দিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এরপর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিলেন। তার ওই অনুরোধে সাড়া দিয়ে সম্পাদক পরিষদ মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করে আজকের আলোচনায় অংশ নেয়।
Leave a reply