অবশেষে এক হলো মীর জুমলা গেট-কামান

|

শাকিল হাসান:

ঢাকার উত্তরাংশে প্রবেশ পথের ফটক আর আসাম জয়ের বিজয় স্মারক কামান। দুটিই পরিচিত বাংলার সুবেদার মীর জুমলার নামে। সাড়ে তিন শত বছর আগের এই দুটি নিদর্শন অবশেষে এক সঙ্গে অবস্থান নিলো। ঘোষণা করলো রাজধানী ঢাকার গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসের। এর ফলে নতুন প্রজন্ম ও পর্যটকরা সেই সময়ের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

কামানটির দৈর্ঘ্য ১১ ফুট। ওজন সাত টন। মুখের ব্যাস ছয় ইঞ্চি। নাম বিবি মরিয়ম। সৈয়দ মোহাম্মদ তাইফুর তার ‘গ্লিম্পস অব ঢাকা’ বইয়ে লিখেছেন, কামানটি নিয়ে ঢাকাবাসীর উচ্ছ্বাসের কথা। শিশুরা প্রায়ই হামাগুড়ি দিয়ে এটির ভেতর ঢুকে যেত বলে ব্রিটিশ আমলে চকবাজারে থেকে সদরঘাটে স্থানান্তরিত হওয়া কামানটির মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। পাকিস্তান আমলে কামানটিকে সদরঘাট থেকে এনে রাখা হয় গুলিস্তান সিনেমা হলের সামনে। ১৯৮৩ সালে কামানটির জায়গা হয় ওসমানী উদ্যানের ভেতরে। ঠিক চল্লিশ বছর পর আবারও জায়গা পরিবর্তন করলো ‘বিবি মরিয়ম’। এবার কামানটির স্থান হলো মীর জুমলার গেটের সামনে।

এ প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসির মামুন বলেন, যেখান থেকে আসাম অভিযান শুরু হয়েছিল, এই কামানটিও সেখান থেকে রওনা হয়েছিল, আবার এটি মূল জায়গায় ফেরত এসেছে। এটি আনন্দের খবর।

এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, এই মীর জুমলা গেট ও কামানের সম্পর্ক তৈরি হলো নতুন করে। তার মানে ঢাকায় মোগলের রাজধানীর উত্তরাংশে এটি আবার প্রতিস্থাপিত হলো। এতে মোগলের রাজধানী ঢাকার ইতিহাস সম্পর্কে ঢাকাবাসী জানতে পারবে।

বুড়িগঙ্গায় ‘কালে খাঁ জমজম’ ডুবে যাওয়ার পর লোকেরা বিশ্বাস করতো– বুড়িগঙ্গা থেকে প্রায়ই কালে খাঁ তার সঙ্গিনী মরিয়মকে ডাকছে। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসবিদরা আরেকটি কামানের কথা উল্লেখ করেছেন তাদের লেখায়। মীর জুমলা বিবি মরিয়মের পাশাপাশি আরেকটি কামান তৈরি করেছিল। সেটির নাম ছিল ‘কালে খাঁ জমজম’। ঢাকাবাসীর মধ্যে কৌতুহল জাগাতো, কোথায় তৈরি হয়েছিলো এসব কামান? এ বিষয়ে মুনতাসির মামুন বলেন, এমন হতে পারে, এটি নির্মিত হয়েছে ঢাকার বাইরে থেকে। ঢাকায়ও যে তৈরি হওয়া অসম্ভব, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না।

দীর্ঘদিন ধরে ‘ঢাকা গেট’ ও ‘বিবি মরিয়ম’ কামান ছিলো মানুষের আড়ালে। ঢাকার নান্দনিক এই নিদর্শন দুটিকে সবার কাছে উপস্থাপনে দক্ষিণ সিটির করপোরেশনের উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত দেখলো আলোর মুখ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকার ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে পারলাম এবং এটিকে নান্দনিকভাবে পরিবেশন করতে পারব। শুধু ঢাকা নয়, সারা বিশ্বের পর্যটকরা এসে উপলব্ধি করবে যে, ঢাকার একটি স্বতন্ত্র চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য আছে। আমাদের বার্তা হলো, ঢাকাকেই আমরা পুনরুজ্জীবিত করতে চাই।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply