দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহেশখালী উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা বিমলেন্দু কিশোর পালের বিরুদ্ধে জাল ব্যালট ছাপানোর অভিযোগ করেছেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কক্সবাজার) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী মোহাম্মদ শরীফ বাদশা। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন নৌকার প্রার্থীকে সহযোগিতা করছেন বলেও অভিযোগ তোলেন।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজার শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
শরীফ বাদশা বলেন, মহেশখালীতে যে নির্বাচনী কর্মকর্তা আছে, উনি জাল ব্যালট ছাপিয়েছেন। একজন কেন্দ্রে ঢুকলে ৫-১০টা হাতে ধরিয়ে দেয়ার একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি তিনি বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েছেন বলে এ সময় জানানো হয়।
এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হলে এবং কালকের মধ্যে ওই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার না করলে নির্বাচন বয়কটের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। বললেন, আগামীকালের মধ্যে এ নিয়ে সরকার ব্যবস্থা না নেয়ার মানে বুঝতে হবে ভোটও সুষ্ঠ হবে না।
জাল ব্যালটের কোনো প্রমাণপত্র তার কাছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শরীফ বাদশা বলেন, আমার হাতে প্রমাণ নেই। যার কাছ থেকে ছাপানো হয়েছে, উনার কাছ থেকে খবর পেয়েছি। আমি নাম বলবো না।
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে বলেও জানান নোঙ্গর মার্কার এ প্রার্থী।
অভিযোগের বিষয়ে বিমলেন্দু কিশোর পাল মুঠোফোনে যমুনা নিউজকে বলেন, একজন প্রার্থী অনেকরকম অভিযোগ করতে পারেন। তবে আমার কাজ হচ্ছে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করা এবং আমি তা করে যাচ্ছি। যে ব্যালট নিয়ে এত কথা হচ্ছে, এই ব্যালট যাবে ভোটের দিন সকালে। ভোটারের সমপরিমাণ ব্যালটই কেন্দ্রে যাবে এবং তা গ্রহণ করবেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা।
এই আসনে এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ বিরাজমান বলেও জানান এই নির্বাচন কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: ’১৪-এ বিনাভোটে, ’১৮-তে রাত ১২টার ভোটে এমপি: সেই আশেককে আ. লীগ নেতা
শরীফ বাদশা আরও অভিযোগ করেন, সরকার যতই সুষ্ঠু নির্বাচন করার কথা বলুক না কেন, স্থানীয় প্রশাসন তা মানছে না। তারা চাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার তো হয়ে গেছে, কেন সরকারের বিরুদ্ধে যাবে? স্থানীয় প্রশাসন থেকে নিরপেক্ষ ভোটের কোনো লক্ষণ পাচ্ছেন না। মহেশখালীতে এজেন্ট-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হুমকি দিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ করেন শরীফ বাদশা।
এবারের নির্বাচনে কক্সবাজার-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিককে ইঙ্গিত করে শরীফ বাদশা বলেন, সে যেহেতু ক্ষমতায়, তাই তার বিরুদ্ধে কেউ যাচ্ছে না। ৮০ শতাংশ সমর্থক আমার পক্ষে। কিন্তু ভোট দিতে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) রাতে কুতুবদিয়ার ধুরুং আদর্শ (পাইলট) উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের নোঙ্গরের প্রার্থীর পথসভা ছিল। এই সভাকে কেন্দ্র করে নৌকা ও নোঙ্গরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার প্রসঙ্গে শরীফ বাদশা জানান, কুতুবদিয়ায় তার সভায় হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে; আঘাত করা হয়েছে ১০-১৫ জন কর্মীকে। এ ঘটনার সময় তিনি স্কুলে অবস্থান নেন। সময়মতো প্রশাসন উপস্থিত হয়ে ব্যবস্থা নিলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না বলেও দাবি করেন তিনি।
এখন তার জীবনের নিরাপত্তা নেই উল্লেখ করে হামলার ঘটনায় কুতুবদিয়া থানায় এজাহার জমা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অবশ্য, কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা অভিযোগ করেছে, নোঙ্গরের সমর্থকরাই তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আর পথসভা থেকে ছাত্রলীগ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তব্য দেয়া হয়েছে।
এবারের ভোটে কক্সবাজার-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী। তারা হলেন আশেক উল্লাহ রফিক (নৌকা), শরীফ বাদশা (নোঙ্গর), মোহাম্মদ খাইরুল আমিন (একতারা), মো. ইউনুস ( মিনার), মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার) ও মাহাবুবুল আলম (আম)। তবে, নৌকা ও নোঙ্গর ছাড়া বাকি প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা তেমন দেখা যায়নি।
/এমএন
Leave a reply