স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:
রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে ১৫টিতেই মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর। এছাড়া তিনটিতে লাঙ্গলের সাথে জাতীয় পার্টির স্বতন্ত্র এবং একটিতে লড়াই হবে লাঙ্গলের সাথে হাতুড়ির। আর বাকি ১৪টিতেই লড়াই হবে লাঙ্গলের সাথে নৌকা এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলছে, একই দলের প্রার্থীদের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এদিকে, এই বিভাগের নির্বাচনের জন্য সকল কেন্দ্র এবং আশেপাশের এলাকায় তিন থেকে সাত স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।
ভোটের মাঠের সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দী নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রাথী। পঞ্চগড়-২ এ সমীকরণটা অবশ্য নৌকা বনাম লাঙ্গল।
অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও-১ এ জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সাথে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। ঠাকুরগাঁও-২ এ নৌকার মাথাব্যাথা দলীয় স্বতন্ত্র এবং ঠাকুরগাঁও-৩ এ লড়াইটা লাঙ্গলের সাথে হাতুড়ির।
এদিকে দিনাজপুরের ১,৩,৪,৫ ও ৬ আসনে নৌকার মুখোমুখি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অবশ্য দিনাজপুর-২ এ নির্ভার নৌকার মাঝি।
নীলফামারীর ৩ ও ৪ আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন তারই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী। নীলফামারী-১ এ নৌকার মুখোমুখি লাঙ্গল আর নীলফামারী-২ আসনে নৌকার সাথে দলীয় স্বতন্ত্রের শক্ত প্রতিদ্বন্দিতার আভাস আছে।
অন্যদিকে কুড়িগ্রাম-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সাথে লড়াইটা হবে জাকের পার্টির। কুড়িগ্রাম-২ এ লাঙ্গল বনাম আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এবং কুড়িগ্রাম-৩ এ নৌকা, লাঙ্গল ও ইসলামী আন্দোলনের বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থীর ত্রিমুখী লড়াই হবে। কুড়িগ্রাম-৪ এ নৌকার সাথে কঠোর প্রতিদ্বন্দিতা হবে লাঙ্গলের।
এবার গাইবান্ধা ১ ও ২ আসনে লাঙ্গলের সাথে ব্যালটের লড়াই হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর। এছাড়া ৩, ৪ ও ৫ আসনে নৌকার সাথে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রের লড়াই দেখতে হচ্ছে। ভোটের মাঠ বলছে, লালমনিরহাট-১ ও ২ আসনে নৌকার সাথে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এবং লালমনিরহাট-৩ এ নৌকা, লাঙ্গল ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রের ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে ভোটের মাঠ।
এদিকে, শক্ত প্রতিদ্বন্দী না থাকায় রংপুর-৩ আাসনে নির্ভার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের লাঙ্গল। রংপুর-১ আসনে অবশ্য লাঙ্গলের সাথে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ও জাপার বহিষ্কৃত স্বতন্ত্রের লড়াইটা শেষ মুহূর্তে জমে উঠতে পারে। রংপুর ২ ও ৫ আসনে লাঙ্গল, নৌকা এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রের লড়াই দেখতে হবে। এছাড়া ৪ ও ৬ আসনে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি জাতীয় পার্টির প্রার্থী।
বেশিরভাগ আসনেই নিজ দলের প্রার্থীদের মধ্যে এই লড়াইকে কীভাবে দেখছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা?বেশিরভাগ স্থানেই নিজ দলের প্রার্থীদের এই লড়াইয়ের ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করেন তারা ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের রংপুর মহানগর সভাপতি জানান, সব কিছু মিলিয়ে যেটা দাঁড়াবে সেটা হলো, নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দি্তার মানসিকতা মেজোরোটি পোর্সন, বা অ্যাবসোল্যুট মেজোরোটি পোর্সন করে নিয়ে আসার কৌশলটা এক সময় আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হয়ে যাবে। কারণ এই ফলাফল দেশে এবং দেশের বাইরে সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা নাও পেতে পারে। সেদিক থেকে তারা আরেকটা চাপে পড়তে পারে।
এই বিভাগের ভোটাররা চান কাজের মানুষ, ভালো মানুষ। যারা বেকারত্ব দূরীকরণসহ স্থানীয় উন্নয়নে রাখতে পারবেন ভূমিকা। বিজয়ের পর ভোটারদের এই চাওয়া কতটা পূরণ হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এ বিভাগে এবার ভোটার ১ কোটি ৩২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯৭জন। ৩৩টি সংসদীয় আসনে ভোটের মাঠে লড়ছেন ১৯০ জন। এরমধ্যে ১৫ জন নারী এবং ১ জন হিজড়া। প্রার্থীদের মধ্যে ৫৭ জন ছাড়া বাকি সবাই রাজনৈতিক দলের নেতা। ৪ হাজার ৬৬৮ ভোট কেন্দ্র এবং আশেপাশের এলাকায় নেয়া হচ্ছে তিন থেকে ৭ স্তরের নিরাপত্তা।
রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন জানান, ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে আসতে এবং বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। সুষ্ঠু এবং নিরপক্ষে ভোট গ্রহণ নিশ্চিতের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মোটরসাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইসির অনুমতি এবং অনুমোদিত ছাড়া কোনো ভারী যানবহান চলাচল করতে পারবে না।
এসজেড/
Leave a reply