দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের ৩ শরিক দল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ৬টি আসন ছাড় পেয়েছিল। আসেনগুলো হলো বগুড়া-৪, রাজশাহী-২, কুষ্টিয়া-২, বরিশাল-২, পিরোজপুর-২ ও লক্ষ্মীপুর-৪।
ছয় আসনের মধ্যে বগুড়া-৪-এ রেজাউল করিম তানসেন (জাসন), রাজশাহী-২-এ ফজলে হোসেন বাদশা, কুষ্টিয়া-২-এ হাসানুল হক ইন (জাসদ), বরিশাল-২-এ রাশেদ খান মেনন (ওয়ার্কার্স পার্টি), পিরোজপুর-২-এ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (জেপি) এবং লক্ষ্মীপুর-৪-এ মোশাররফ হোসেন (জাসদ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সকলেই নৌকা নিয়ে ভোটের মাঠে হাজির হন। জাতীয় পার্টি (জেপি) মঞ্জুও নিজের বাইসাইকেল রেখে প্রথমবারের মতো নৌকায় উঠেন। বাকিদের আগে নৌকা নিয়ে ভোট করার অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু রক্ষা হয়নি মঞ্জুর। প্রথমবারের মতো দেখলেন হারের মুখ।
সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে পরাজিত হলেন জেপি চেয়ারম্যান। পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠী) আসনে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। তিনি ৯৯ হাজার ৭২৪ ভোট পেয়েছেন। বিপরীতে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেলেন ৭০ হাজার ৩৩৩ ভোট।
কেবল জেপি চেয়ারম্যান নন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতিও হেরে বসলেন। হাসানুল হক ইনুকে পরাজিত করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন। ট্রাক প্রতীকের এ প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট।
কামারুল আরেফিন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। একসময় তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন দুইবার।
আরেক শরিক দলের প্রধান রাশেদ খান মেনন ঢাকা থেকে বরিশালে গিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করেছেন বটে। তবে তার দল ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাও হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।
রাজশাহী-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা কাঁচি প্রতীকে ৫৪ হাজার ৯০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীক নিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা পান ৩১ হাজার ৪৬৬ ভোট।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনেও জাসদের মোশারফ হোসেনের মুখে হাসি ফুটেনি। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮১০ ভোট। এই আসনে জয়ী হওয়া ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ ৪৬ হাজার ৩৭২ ভোট পেয়েছেন।
রাশেদ খান মেনন ছাড়া শরিকদের মধ্যে জয়ের হাসি হেসেছে কেবল বগুড়া-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রেজাউল করিম তানসেন।
আওয়ামী লীগ থেকে ছাড় পাওয়া ছয় আসন ছাড়াও আরও অনেক আসনে লড়ে শরিক দলের প্রার্থীরা। সেসব আসনে নামমাত্র লড়েন তারা।
নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চব্বিশের ভোটে ১৪ জোটের আওয়ামী লীগের শরিকরা জাতীয় পার্টি (জেপি) ১৩টি আসনে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬টি আসনে, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ১২২টি আসনে, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৩৮টি আসনে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ৫টি আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬টি আসনে, সাম্যবাদী দল ৪টি আসনে ও গণতন্ত্রী পার্টি ১০টি আসনে প্রার্থী দেয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ৯৭১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তার মধ্যে ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে অনেকেই ভোটের আগে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। কেউ কেউ ভোটের দিনে বর্জনের ঘোষণা দেন। শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ ভোটগ্রহণ।
৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়। নওগাঁ-২ আসনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুতে সেখানে ভোট হয়নি। পুনরায় সেখানে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তখন আরও প্রার্থী যুক্ত হতে পারে।
এদিকে, এক কেন্দ্রের অনিয়মে আটকে গেছে ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফল। ওই কেন্দ্র ছাড়া এই আসনের ঘোষিত ফল অনুযায়ী নিলুফার আনজুম পপি (নৌকা) ৫৩ হাজার ১৯৬ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সোমনাথ সাহা ট্রাক প্রতীকে ৫২ হাজার ২১১ ভোট পেয়েছেন। দুইজনের মধ্যে ব্যবধান হাজারের কম হওয়ায় ফল আটকে গেছে।
এবারের ভোটে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। আর নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২। ৮৫২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চব্বিশের ভোটে ৪০ শতাংশ মতো ভোট পড়েছে।
/এমএন
Leave a reply