রিমন রহমান:
ব্যাংক খাতে জমেছে খেলাপি ঋণের স্তূপ। মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। রাজস্ব আয়ে তেমন গতি নেই। ব্যবসা শুরু ও পরিচালনায় জটিলতা রয়েই গেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতিও এখন ১২ শতাংশের বেশি। এমন অবস্থায় শুরু হচ্ছে নতুন সরকারের পথচলা। সকলেরই প্রশ্ন, দামের উত্তাপ থেকে কীভাবে মুক্তি সম্ভব?
অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. মাহফুজ কবীর বলেন, প্রত্যেক মেজর পণ্যে তদারকি দরকার। এজন্য ডেডিকেটেড টিম দরকার, সেটা হতে পারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের, ভোক্তা অধিকারের ও প্রতিযোগিতা কমিশনের। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানেরই একটা নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে স্বচ্ছতা না থাকার কারণে বাজারে এ বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এছাড়া, ব্যাংক খাতে অনিয়মে জড়িতদের হচ্ছে না শাস্তি। দিনদিন টাকার অবমুল্যায়ন হচ্ছে, বিপরীতে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুঁটছে ডলার। স্থিতিশীলতায় সংস্কার উদ্যোগ হাতে নেয়ার তাগিদ বিশ্লেষকের।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে যে অবস্থা সেটা থেকে উত্তরণ করতে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের পৃথক করতে হবে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপী তাদেরকে দেওলিয়া ঘোষণা এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
আর্থিক অনিয়মে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক প্রত্যয় প্রয়োজন। তা না হলে অর্থনীতিতে স্বস্তি আশা করা কঠিন বলেছেন এই বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ঋণখেলাপি, করখেলাপি বা অর্থপাচার বলি, এগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। সেই ভূমিকা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা, প্রত্যয় ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এদিকে, একের পর এক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু তা অর্থনৈতিক করিডোরে রূপান্তর করতে হলে দরকার বিনিয়োগ। সেই সুযোগ সৃষ্টির কথা বললেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
সিপিডির এ সম্মানীয় ফেলো বলেন, রাস্তা-ট্রান্সপোর্ট করিডোর করেছি, কিন্তু এটাকে ইকনোমিক করিডোরে করতে হবে। তা করতে বিনিয়োগ লাগবে। সেটা করা হলে তখন রাজস্ব আসবে। যেটা দিয়ে মেইনটেনেন্স করা যাবে। রিকভারও করা যাবে। রেট অব রিটার্নও ভালো হবে।
এটি স্পষ্ট যে, বৈশ্বিক নানা পেক্ষাপটে টিকে থাকতে হলে দূরদর্শী আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। সুশাসন ফিরিয়ে আনা না গেলে অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হবে না। এই প্রসঙ্গে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুশাসন, সাশ্রয়ীভাবে বাস্তবায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা— এগুলোতে যে অবনমন হয়েছে, তাতে ধাক্কা দিতে হবে।
/এমএন
Leave a reply