বিএনপির আন্দোলনে নতুন কর্মপরিকল্পনা!

|

শরিফুল ইসলাম খান:

দীর্ঘ আড়াই মাস পর প্রাণ ফিরেছে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসছেন দলটির নেতাকর্মীরা। অনলাইনের বদলে দলের কার্যালয় থেকে তিনদিন ধরে প্রেস ব্রিফিং করা হচ্ছে। এবার কি দলটি তাদের চলমান আন্দোলনে কোনো ভিন্নতা আনবে?

জানা গেছে, একদফা দাবি আদায়ে আবারও নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাস্তবতার আলোকে ঠিক করা হচ্ছে এ কর্মসূচি।

তবে পুরনো অনেক মামলায় বহু নেতাকর্মী জেলে রয়েছেন। সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও নতুন মামলা। গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে অনেকের নামে। মামলা-হামলা আর জেল-সাজাসহ নানা প্রতিকূলতায় হতাশা আছে বিএনপির বিভিন্ন স্তরে।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, ভোট বর্জনের আন্দোলন করে কী লাভ হয়েছে দলটির। যদিও নেতারা বলছেন, তাদের মধ্যে কোনো হতাশা নেই। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিজয়ের পথেই রয়েছে বিএনপি।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আ ন ম ইব্রাহিম খলিল বলেন, লাভ-ক্ষতির হিসেবে রাজনীতি হয় না। আমরা যেটি চাচ্ছি, তা হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। সাধারণ মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। মানুষ যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে সেই আন্দোলনই আমরা করছি।

দলটির কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল বলেন, নির্বাচন আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে গেছে। এই সরকারের ব্যর্থতা, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না সেটি আবারও প্রমাণ হয়েছে। এর মাধ্যমে খাঁটি নেতাকর্মীরা বেরিয়ে আসবে, যারা এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।

ভোটের আগে হরতাল-অবরোধ আর অসহযোগের মতো কর্মসূচি দিলেও নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি বিএনপি। যাদেরকে পরিস্থিতি বদলের সহায়ক শক্তি বলে ভাবছে বিএনপি, তারাও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সবমিলিয়ে দলটিকে কি হতাশা গ্রাস করেছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আমরা হতাশা নই, নেতাকর্মীরাও হতাশ নয়। হতাশ হয়েছে সরকার। তারা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যে নির্বাচন করেছে জনগণ সে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সেজন্য তারা সবচেয়ে বেশি হতাশ।

এদিকে, বিএনপির অনেক নেতা বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের পর পরিস্থিতি এতো জটিল হবে কিংবা সরকার এতটা হার্ডলাইনে যাবে তা বুঝতেই পারেননি তারা। রাজনৈতিক দল হিসেবে এটি বিএনপির ব্যর্থতা কি না, এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আমাদের কোনো ব্যর্থতা নেই। সরকারের হাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। সবকিছু তাদের হাতে। আমাদের ব্যর্থতা কোথায়? আমরা তো চেষ্টা করছি। জনগণ আমাদের সাথে আছে। গ্রেনেড, সাউন্ড গ্রেনেড, গুলি, টিয়ার গ্যাসের সামনে কে দাঁড়াতে পারে?

গত দুই মাসে দলটির ডাকা বিভিন্ন কর্মসূচি মূলত টেনে নিয়েছেন মাঠের নেতারা। তাদের দাবি, ঘরবাড়ি ছাড়া নেতাকর্মীরা ঘুমিয়েছেন মাঠ-ঘাটে, নয়তো বন্ধু-স্বজনের বাসায়। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি আরও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তারা।

এমন প্রেক্ষাপটের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের আন্দোলন যদি আদর্শ ও ন্যায়ের হয়, গণতন্ত্রের পক্ষের হয়, সে আন্দোলন কখনও বৃথা যাবে না। সরকার চেষ্টা করেছিল বিএনপিকে ভাঙতে। কিন্তু ভাঙতে পারেননি। বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের ভাগাতে পারেনি। এটাই তাদের পরাজয়। জনগণকে ভোটকেন্দ্রে নেয়া যায়নি। কাজেই বিএনপি বিজয়ের পথেই রয়েছে।

/এনকে/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply