সাগর ফরাজী, জামালপুর করেসপনডেন্ট:
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদে অসময়ে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। টানা দুই মাসের ভাঙ্গনের আঘাতে পূর্ব পাড়ে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বসত-বাড়ি ও ফসলী জমি। এছাড়াও হুমকিতে রয়েছে হাট-বাজারসহ সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান।
ভাঙ্গনে ভিটা মাটি হাড়িয়ে নদী রোধে স্থায়ী সমাধান চান এলাকাবাসী। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, অনুমোদিত হলেই নেয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরআমখাওয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি গ্রাম নদের গর্ভে চলে গেছে। বসত ভিটা হারিয়েছেন প্রায় শতাধিক পরিবার।
সবশেষ অসময়ে নদী ভাঙ্গনে পাটাধোয়া পাড়া গ্রামে বাস করা বাসিন্দারা এখন বেশ বিপাকে। বেশ কয়েকবার নদী ভাঙ্গনের পর অস্থায়ী ভাবে বসতি করে থাকার জায়গাও পাচ্ছে না এই গ্রামের মানুষরা। শীতের এই সময়ে নদীর তীরে চলমান এক কিলোমিটার ভাঙ্গনের ফলে চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া বন্ধের পথে তারা। স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে কিছু বস্তা নদীতে ফেলা হলেও তা খুবই অপ্রতুল।
স্থানীয়রা জানান, বাধ না থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব তীরে গত দুই বছরে প্রায় চার হাজার ও গত দুই মাসে টানা ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বসতবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দুইশত একর ফসলি জমি। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এই এলাকার কমপক্ষে শতাধিক পরিবার। তবে এই নদী ভাঙ্গন রোধে কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। শুষ্ক মৌসুমে নদের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলেও অসময়ের ভাঙ্গনে হতবাক তারা। পানির প্রবাহ কম থাকার সময় যদি এই নদীতে বাধ বা অন্য কোনো ভাবে থামানো না যায় তবে বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ ভাঙ্গনের রুপ নিতে পারে বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।
মিজানুর রহমান নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার পাঁচ বিঘা জমি নদী নিয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গন আমি আগে কখনও দেখিনি। গত কয়েকদিনের ভাঙ্গনে অনেক কিছু চলে গেছে। বাড়ি ও কবরস্থান চলে গেছে। নদীর ভাঙ্গনের জন্য রাতে ঘুমাতে পারি না।
নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে প্রতিবেদক কথা বলেছেন ভুক্তভোগী ষাট বছরের এক বৃদ্ধের সাথে। তার নাম লুৎফর রহমান। এতদিনে এই নদী তার বাড়ি ভেঙেছে চারবার। ফসলি জমি হারিয়েছেন কয়েক বিঘা। এখন তিনি এই নদীর জন্য অসহায়। স্থায়ী বাধ চান তিনি।
লুৎফর রহমান বলেন, আমার সব কিছু নিয়ে গেছে এই নদী। এখন আর কিছু নাই। শেষমেশ একটা জায়গায় বাড়ি করে আছি সেটাও বুঝি নিয়ে যায় যায় অবস্থা।
চরআমখাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যন জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ভাঙ্গন রোধে একটি বাধ তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ পানি উন্নয়নের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। অনেক কিছু নিয়ে গেছে নদী। ভাঙ্গনের কারনে হুমকিতে রয়েছে হাজারও বসতবাড়ি, হাট-বাজারসহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে নদীতে আগাম কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে।
জামালপুুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গন প্রতিরোধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুমোদিত হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া স্থায়ীভাবে বাধ তৈরির জন্য আলাদা একটি প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে।
/এমএইচ
Leave a reply