সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা:
পর্দা উঠলো ৪৭ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার। কলকাতা সংলগ্ন সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কে বইমেলার স্থায়ী প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বইমেলার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে বইমেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন মমতা। পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বইমেলা নিয়ে নিজের লেখা কবিতা পড়ে শোনান তিনি।
প্রতি বারের মতো এবারও মেলার অন্যতম আকর্ষণ বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঅধরা মানবিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত রিকশা এবং রিকশাচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। ৩,২০০ স্কয়ার ফুটের এই প্যাভিলিয়নেে এবার অংশ নিয়েছেন ১০টি সরকারি ও ৩৩টি বেসরকারি স্টল। আজ বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিনেই বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন”-এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব জনাব খলিল আহমদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের ব্রিটিশ উপরাষ্ট্রদূত আলেক্স এলিস, সাহিত্যিক বাণী বসু, পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে ও রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য।
অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন, কলকাতার বইমেলা বিশ্বমেলায় পরিণত হয়েছে। এককালে ছোট্ট, একটুকরো জায়গায়, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বইমেলা হতো। এখন যেখানে মেলা হচ্ছে, অনেক জায়গা রয়েছে। এই বইমেলা একদিন বিশ্বের এক নম্বর হবে। বাংলাই পথ দেখায়, একটু সময় করে বই পড়ুন, নতুন প্রজন্ম বই পড়ুন। বইমেলা প্রাঙ্গণই কলকাতা বইমেলার স্থায়ী জায়গা বলেও এদিন ফের জানান মমতা। বইমেলা কমিটির হাতেই বইমেলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে, প্রতি বছর কমিটির সঙ্গে তার সরকার বৈঠক করে, সবরকম সাহায্য প্রদান করে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই এদিন নিজের লেখা আটটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন মমতা। তিনি বলেন ‘১৯৯৫ সাল থেকে আমার বই বেরোয়। আমার প্রথম বই ‘উপলব্ধি’। আজকের হিসেব ধরলে আমার মোট বই ১৪৩টি। আগামী বছর আরও ৭টি বই লিখব বইমেলার আগে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাস্তায় যেতে যেতেও লিখতে ভাল লাগে তার। কিন্তু লেখার জন্য তেমন সময় পান না।
তিনি বলেন, অন্য কেউ যদি লিখে নিতেন, তাহলে আরও বই হতো। বইমেলা নিয়ে লেখা তার কবিতাটি অনেক আগে লেখা বলেও জানান। চলতি বছর ২০২৩ কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার থিম কান্ট্রি গ্রেট ব্রিটেন। ছোট ও মাঝারি প্রকাশক ও লিটল ম্যাগাজিনের টেবিল মিলিয়ে চলতি বছর মেলায় স্টলের মোট সংখ্যা এবার প্রায় ১০০০টি। সরাসরি ও যৌথভাবে মেলায় অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশ, ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান, ফ্রান্স, ইতালি, আর্জেন্টিনা, কিউবা,থাইল্যান্ড, পেরু, জার্মানী, কলম্বিয়ানি সহ মোট ২০টি দেশ। ৪৭ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।
১৯ জানুয়ারি বইমেলার দ্বিতীয় দিনে ‘ব্রিটেন ডে’ পালিত হবে। ২০ জানুয়ারি বইমেলায় পালিত হবে ‘বাংলাদেশ দিবস’। বইমেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের জন্য “শিশুদিবস” উদ্যাপিত হবে ২১ জানুয়ারি দিনটি। ২৪ জানুয়ারি প্রবীণ নাগরিকদের বইমেলায় পালিত হবে ‘সিনিয়র সিটিজেন ডে’। বইমেলার বিশেষ আকর্ষণ- ‘লিটারেচার ফেস্টিভেল’ অনুষ্ঠিত হবে ২৬ থেকে ২৮শে জানুয়ারি। ৩১ জানুয়ারি বইমেলার শেষ দিন। ওই দিন রাত ৯টায় বইমেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠান হবে। থাকবে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানও।
মেলায় ঢোকা ও বেরোনোর জন্য থাকছে মোট নটি প্রবেশদ্বার। বইমেলায় সরাসরি না এসে অন লাইনে ভার্চুয়ালি সরাসরি মেলা দেখার সুযোগ থাকছে এবারও। তার জন্য গিল্ডের নির্দিষ্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইট পেইজে যেতে হবে দর্শক ও পাঠকদের।
এটিএম/
Leave a reply