মিশুক নজিব ⚫
বাংলাদেশের যমুনা টেলিভিশন আর কত চূড়ায় উঠবে? এই প্রশ্ন এখন কেউ করতেই পারেন। সংবাদভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলের বিশ্ব চূড়ায় এখন যমুনা টেলিভিশন। আর বাংলাদেশের এক নম্বর ইউটিউব চ্যানেলের তকমা তো আগেই জুটিয়েছে।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) শীতের সকালেই সংবাদ আসে, যমুনা এখন বিশ্ব সেরা। যে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাংবাদভিত্তিক এ টেলিভিশন চ্যানেল পেছনে ফেলেছে বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন, ফক্স নিউজ, এনবিসি, ফোর্বস ব্রেকিং নিউজ ও এবিসির মতো চ্যানেলকে।
যমুনা টেলিভিশনের এগিয়ে যাওয়ার এমন খবর বছরের শুরু থেকেই আসছে। চব্বিশের প্রাক্কালেই মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জরিপ সংস্থা সোশ্যাল ব্লেডের র্যাঙ্কিংয়ে ‘নিউজ অ্যান্ড পলিটিক্স’ ক্যাটাগরিতে ছয়ে উঠে আসে যমুনা। তারপর বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন জানা যায়, আরও দুই ধাপ এগিয়েছে। ১৩ জানুয়ারি আরও দুই ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নেয় যমুনা টেলিভিশন।
সপ্তাহ পার হতেই যমুনার গন্তব্য এবার সোশ্যাল ব্লেডে বিশ্বে সংবাদভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলের শীর্ষস্থান। এমন দৃষ্টান্ত প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি কোনো সংবাদমাধ্যমের! এই র্যাঙ্কিংয়ের সেরা দশ ইউটিউব চ্যানেলের তালিকায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করছে শুধু যমুনা টেলিভিশনই।
সোশ্যাল ব্লেডের র্যাঙ্কিং
কেবল চব্বিশে নয়, গত হওয়া বছরগুলোতেও এই র্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছিল যমুনা। বাংলাদেশি কোনো ইউটিউব চ্যানেল হিসেবে যমুনা রাঙিয়েছিল তিন, চার ও পাঁচের মতো স্থান।
সোশ্যাল ব্লেড প্রতি সপ্তাহে ইউটিউব চ্যানেলের দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি কনটেন্টের মান বিবেচনা করে এই র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে। সোশ্যাল ব্লেড ইউটিউব সার্টিফাইড র্যাঙ্কিং নির্ধারণকারী অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। তারা ইউটিউব ছাড়াও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্যও প্রকাশ করে থাকে।
র্যাঙ্কিং নির্ধারণকারী এই প্ল্যাটফর্মে শীর্ষস্থান অর্জন সম্পর্কে যমুনা টেলিভিশনের নিউ মিডিয়া এডিটর রুবেল মাহমুদ বলছিলেন, অনেক চ্যানেলের মতো স্রোতে গা না ভাসিয়ে নিউজের গুরুত্ব বুঝে কনটেন্ট দেয়ার চেষ্টা করি। দর্শককে বিভ্রান্ত করে ভিউ নেয়ার পরিবর্তে বরং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের বিভ্রান্তি কাটানোর চেষ্টা থাকে সবসময়। তারই প্রতিফলন ঘটেছে সোশ্যাল ব্লেডের র্যাঙ্কিংয়ে।
যমুনা টেলিভিশন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মানুষের বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আস্থা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে যমুনার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার এক কোটি ৬০ লাখের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। কেবল ইউটিউবে নয়, যমুনার ফেসবুক পেজও পিছিয়ে নেই। এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্রাউডট্যাঙ্গেল ডেটাবেসের হিসেবে প্রায়ই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ইন্টার্যাকটিভ পেজের তালিকায় থাকে যমুনার ফেসবুক পেজ।
কীভাবে এলো যমুনার এমন অর্জন, দর্শকদের আস্থা ও ভালোবাসা? প্রধান বার্তা সম্পাদক (সিএনই) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তথ্যের যাতে কোনো ব্যতয় না ঘটে এবং তা যত দ্রুত করা যায়— সে বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিই সবচেয়ে বেশি। এজন্য যমুনা টিম একযোগে কাজ করে। এরই ফল পেয়েছি আমরা।
যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহিম আহমেদ এমন অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বললেন, মানুষের তথ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বৈচিত্র্যের দিকেও আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বস্তুনিষ্ঠতা টিম যমুনার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
তিনি আরও বলেন, দেশের অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেলও নিশ্চয় উদ্বুদ্ধ হবে আমাদের অর্জনে। আমরা চাই তারাও এ প্রতিযোগিতায় থাকুক, সেরা দশে স্থান করে নিক।
আজ প্রকাশিত সোশ্যাল ব্লেডের এ র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা ইউটিউব চ্যানেল দুইটি ভারতের। চারে রয়েছে দেশটিরই সংবাদভিত্তিক চ্যানেল আজ তাক। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা অ্যারাবিক পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে।
জনগণের কথা বলে বিশ্ব দরবারে নিজেদের এমন উপস্থিতি জানান দিতে ’১৪ সালের ৫ এপ্রিল যাত্রা শুরু হয়েছিল যমুনা টেলিভিশনের। প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম স্বপ্ন দেখতেন, এই টেলিভিশন একদিন বিশ্বের ‘আল জাজিরা’ হয়ে উঠবে। মানুষের প্রতিনিধি হবে। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলবে।
যমুনা টেলিভিশনের কর্মীদের তিনি উৎসাহ দিতেন পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা করার। তারই প্রতিষ্ঠিত এই টেলিভিশন চ্যানেল সে পথে হাঁটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাতেই ধরা পড়লো এমন সাফল্য। আজ নুরুল ইসলাম নেই, নিশ্চয় তিনি ওপার থেকে দেখছেন বাংলাদেশের যমুনা টেলিভিশনের নামের পাশে এখন যোগ হয়েছে বিশ্ব সেরার খেতাব।
টিম যমুনা মনে করে, দর্শক-শুভানুধ্যায়ীরাও এই এগিয়ে যাওয়ায় সারথী। তারা যমুনায় আস্থা রেখেছেন, ভালোবেসেছেন। তাই তাদের প্রতি রইলো টিম যমুনার অভিবাদন। পাশাপাশি দর্শকদের উদ্দেশে যমুনা টেলিভিশন বলছে—
প্রিয় দর্শক, তোমার রোজকার অভ্যাসে আমি। আমার ওপর তোমার আস্থা আমাদের সম্পর্ককে করেছে আরও গভীর। কথা দিচ্ছি, নির্ভরতার প্রতিদান দিতে আগামীতেও প্রত্যাশা পূরণ করবে আমাদের এই যুগল পথচলা।
Leave a reply