বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুর্দান্ত ঢাকাকে ছয় উইকেটে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে লাসিথ ক্রুসপুল্লের ৪৬ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে আট উইকেটে ১৩৬ রানের পুঁজি পায় ঢাকা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তানজিদ হাসান তামিম এবং নাজিবউল্লাহ জাদরানের নান্দনিক দু’টি ইনিংসে ১০ বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় চট্টগ্রাম। এই জয়ের ফলে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে পৌঁছে গেল শুভগত হোমের দল।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে শুরুটা মনমতো করতে পারেনি ঢাকা। দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় দলটির লঙ্কান রিক্রুট দানুশকা গুনাথিলাকাকে। আল আমিন হোসেনের বলে মুখের থুতনিতে ব্যথা পেয়ে ফিজিওর চিকিৎসা নিয়ে মাঠ ছাড়েন গুনাথিলাকা। একটু পর গুনাথিলাকার কনকাশন সাব হিসেবে লাসিথ ক্রুসপুল্লের নাম প্রকাশ করে ঢাকা।
উইকেটে নেমে সুবিধা করতে পারেননি সাইফ হাসান। ৯ বলে ৯ রান করে আল আমিনের শিকার হয়েই ফিরে যান তিনি। ড্রাইভ করতে গিয়ে কভারে নাজিবউল্লাহ জাদরানের তালুবন্দি হন তিনি। পঞ্চম ওভারে ফিরে যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। শুভাগত হোমকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে নিহাদুজ্জামানের তালুবন্দি হন কোনো রান না করা মোসাদ্দেক।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে আরও দুই উইকেট হারায় ঢাকা। নিহাদুজ্জামানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কভার পয়েন্টে তানজিদ হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন নাইম শেখ। ১১ বলে ৮ রান আসে বাঁহাতি এই ওপেনারের ব্যাটে। একই ওভারের পঞ্চম বলে রান আউটের ফাঁদে পড়ে আউট হন অ্যালেক্স রস। দু’টি চারে এই অস্ট্রেলিয়ানের ব্যাটে আসে ৯ বলে ১১ রান।
৩৩ রানে চার উইকেট হারানোর পর ক্রুসপুল্লে এবং ইরফান শক্কুরের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ঢাকা। এই দু’জন দলের রানের খাতায় যোগ করেন ৭৩ রান। তবে হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি ক্রুসপুল্লে। ৩১ বলে তিনটি চার ও দুটি ছক্কায় ৪৬ রান করে কার্টিস ক্যাম্ফারের শিকার হয়ে বিদায় নেন তিনি। ইনিংসের ১৮তম ওভারে ফিরে যান ইরফানও। ২৬ বলে ২৭ রান করে বিলাল খানের বলে বোল্ড হন তিনি। শেষদিকে তাসকিন আহমেদের ৯ বলে ১৫ রানের ইনিংসে কিছুটা লড়াই করার মতো পুঁজি পায় ঢাকা। চট্টগ্রামের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন আল আমিন এবং বিলাল। একটি করে উইকেট নেন শুভাগত, নিহাদুজ্জামান এবং ক্যাম্ফার।
১৩৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুর্দান্ত শুরু করে চট্টগ্রাম, ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারির হ্যাটট্রিক আসে আভিষ্কা ফার্নান্দোর ব্যাট থেকে। কিন্তু শরিফুল ইসলামের এই ওভারেই উইকেট হারান আভিষ্কা। ওভারের শেষ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৩ চারে ১২ রান করেন এই লঙ্কান ব্যাটার। বাজে শুরুর পরও দারুণভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন শরিফুল। নিজের পরের ওভারে এসে ফেরান তিনে নামা ইমরানউজ্জামানকে।
এবারও শরিফুলের বলে এলবিডব্লিউ হন ইমরান। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি ইমরান। ২৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। এরপর চ্যালেঞ্জার্সরা বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে দুই বন্ধু তামিম-দিপুর ব্যাটে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এই দুই তরুণ ব্যাটার ৫২ বলে যোগ করেন ৫৩ রান। তাতেই যেন সহজ হতে থাকে চট্টগ্রামের জয়ের পথ।
ইনিংসের ৪র্থ ওভারে বল হাতে অ্যাকশনে আসেন তাসকিন আহমেদ। শুরুর তিন বলে দেননি একরানও, কিন্তু পরের তিন বলে তানজিদ তামিমের ব্যাটের কাছে খরচ করেন টানা তিন বাউন্ডারি। পরের ওভারে আরাফাত সানিকে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান শাহাদাত হোসেন দিপু। ৫ ওভারে পঞ্চাশ রানে পৌঁছে যায় চট্টগ্রামের সংগ্রহ।
তবে দিপুর ধীরগতির ইনিংস বেশিক্ষণ স্থায়ী করতে দেননি ঢাকার পাকিস্তানি স্পিনার উসমান কাদির। অফ স্টাম্পের বাইরে স্লোয়ার বল খেলতে গিয়ে ক্যাচ হন ৩১ বলে ২২ রানে থাকা দিপু। এরপর তানজিদ তামিমকে সঙ্গ দিতে আসেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। ১৪ ওভারে দলীয় সংগ্রহ একশোতে পৌঁছায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের।
তাসকিন আহমেদ নিজের শেষ ওভার করতে এসে ফেরান দারুণ খেলতে থাকা তানজিদ তামিমকে। ওভার বাউন্ডারি খেলতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ হন ব্যক্তিগত ৪৯ রানে। ৪০ বলে তার এই ইনিংস সাজানো ছিল ৫ চার ও ১ ছক্কায়। তামিম আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও চট্টগ্রামের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন নাজিবউল্লাহ। তাকে শেষবেলায় সঙ্গ দেন অধিনায়ক শুভাগত হোম।
৩ ছয় ও ১ চারের সাহায্যে ১৯ বলে ৩২ রানের ক্যামিও ইনিংসে অপরাজিত থাকেন নাজিবউল্লাহ। শুভাগত হোম ৭ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন। ১০ বল বাকি থাকতেই চট্টগ্রামের ৬ উইকেটের জয়। ঢাকার হয়ে শরিফুল ইসলাম নেন ২ উইকেট। এছাড়াও ১টি করে উইকেট নেন উসমান কাদির ও তাসকিন আহমেদ।
/আরআইএম
Leave a reply