ফসলহানির ক্ষতি পোষাতে স্কুল বাদ দিয়ে কয়লা শ্রমিক

|

নেত্রকোণা প্রতিনিধি:

হাওরাঞ্চলে এ বছর পরপর দু’বার বড় ধরনের বন্যার কারণে ফসলহানিতে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন নেত্রকোণার মানুষ। দু’বেলা ভাত জোগাড় করতে এখন অনেক পরিবারের সব সদস্য মিলে কাজে নেমেছেন। লাঠে উঠেছে বাচ্চাদের পড়াশোনা। স্কুল বাদ দিয়ে এখন কয়লা শ্রমিকও হচ্ছে অনেকে।

নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদী পাড়ের কয়েক হাজার মানুষ এমনভাবে দিন কাটাচ্ছে। নদী থেকে কয়লা তুলে জীবিকা নির্বাহে নেমেছেন কয়েক হাজার মানুষ। কাজের তুলনায় শ্রমিক বেড়ে যাওয়ায় কয়লা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কমিয়ে দিয়েছেন কয়লার দাম। এতে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা দশা হয়েছে হাওরাঞ্চলের মানুষদের।

স্ত্রী সন্তান নিয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করে নদী থেকে কয়লা তুলে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। মাত্র কয়েকজন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে প্রতিদিন কয়েক হাজার শ্রমিকের তোলা কয়লা অল্প দামে কিনে নিয়ে বিক্রি করছেন দ্বিগুণ দামে। অন্যদিকে সরকারী হস্তক্ষেপ না থাকায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র।

নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীর বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পেছন থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে সোমেশ্বরী নদীর মুখ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশ জুড়ে প্রতিদিন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কয়লা তুলে জীবিকা নির্বাহ করে এলাকায় কয়েক হাজার কয়লা শ্রমিক। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে সারাদিন হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনির পর ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। মাত্র দেড়’শ থেকে তিন’শ মণ কয়লা নদী থেকে কিনে নিয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে এ চক্র।

পরপর দু’বার ফসলের ক্ষতি হওয়ায় অনেকেই নিজের স্কুল পড়ুয়া শিশুদের নিয়ে নেমে পড়েছেন কয়লা তোলার কাজে। দুর্গাপুর উপজেলার ফারংপাড়া গ্রামের কুলসুমা বেগম জানান, তার তিন সন্তান নিয়ে প্রতিদিন কয়লা তুলে পাঁচ থেকে আটশ টাকা আয় করেন। কোনো কোনো দিন দেড়শ টাকা থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ কয়লা বিক্রি করেন তিনি। যদি কয়লা ব্যবসায়ীরা ন্যায্য মূল্য দিতো তাহলে তার ১ হাজার থেকে বারোশ টাকা হতো। বর্তমানে প্রায় তার অর্ধেক মূল্যেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।

একই এলাকার কয়লার তুলতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক ইউপি সদস্য জানান, পরপর দু’বার ফসল ক্ষতি হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে প্রতিদিন কয়লা তুলছেন। এই নদীতে প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার স্থানীয় কয়লা শ্রমিক কয়লা তুলছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কেউই সঠিক দাম পাচ্ছেন।

বিরিশিরি এলাকার কুদ্দুছ মিয়া জানান, ব্যবসায়ীরা একেক দিন একেক দামে কয়লা কিনেন । তাই তাদের কষ্ট কাজে লাগছে না। তারা কোনো মতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারছেন।

সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য দেখতে আসা বারহাট্টা উপজেলার ফকিরের বাজার এলাকার সিদ্দিকুর রহমান জানান, এখানে একদিকে শ্রমিকরা ঠকছে অন্যদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্চে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে। নদীর থেকে কয়লা পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করলেও কেউ বিষয়টি দেখবাল করছে না।

কয়লা কিনতে আসা ব্যবসায়ী রফিক মিয়া জানালেন, তারা তিন থেকে সাড়ে তিন’শ টাকা মণ কয়লা কিনে আধা কিলোমিটার দূরে ঘাটে নিয়ে তারা বিক্রি করছেন।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রশীদ জানান, এই নদী থেকে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা করে আয় করছেন। সিন্ডিকেট চক্রের ব্যাপারে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
স্থানীয় প্রশাসনের হিসেবে প্রতিদিন সোমেশ্বরী নদী থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা কয়লা উত্তোলন করছেন শ্রমিকরা।

/কিউএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply