নয়টি ছোট সংখ্যার চ্যালেঞ্জ নিতে ‘প্রতিদিন সুডোকু’

|

যখন আপনি অসম্ভবকে বাদ দেবেন, তখন যা কিছু অবশিষ্ট থাকে। তা যত অবিশ্বাস্যই হোক না কেন, সত্য হবেই। বলেছিলেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের লেখা অমর ডিটেকটিভ চরিত্র শার্লক হোমস। এ কারণেই কি বলা হয়, সুডোকুর ক্ষেত্রে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই?

সুডোকু নামের ধাঁধার গ্রিড মনকে অচল করে দেয়, যেন মস্তিষ্কের সব ক্ষমতাকে একটি ৯x৯ বর্গাকার জালের মধ্যে আটকে রাখে। সেখানে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা দিয়ে সাবধানে পূরণ করতে হবে, নির্দিষ্ট সব নিয়ম মেনে। এই আবদ্ধতা আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে।

২০০৬ সালে ইতালির লুক্কায় প্রথম বিশ্ব সুডোকু চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নেয় ২২ দেশের প্রতিযোগী। বিজয়ী হন চেক রিপাবলিকের একজন ৩১ বছর বয়সী নারী, তিনি পেশায় একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা জানায়, সুডোকু উন্মাদনার কারণে সেসময়ে পেনসিল বিক্রির হার বেড়েছিল ৭০০ শতাংশ। ২০০৫ সালের নভেম্বরে সকল কেবিন ক্রুর কাছে একটি নোটিশ পাঠায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় বিমানকর্মীরা সুডোকু মেলাতে পারবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

আন্তর্জাতিকভাবে সুডোকুর জনপ্রিয়তা অনেক। ধাঁধা সমাধানকারীকে ৮১টি বর্গাকার ঘর বা সেলের একটি চার্ট দেয়া হয়, যেখানে প্রায় ২০টি বর্গাকার ঘর বা সেল পূরণ করা থাকে। বড় গ্রিড আবার নয়টি ৩x৩ গ্রিডে বিভক্ত। চ্যালেঞ্জ হলো ফাঁকা ঘর এমনভাবে পূরণ করতে হবে, যেন প্রতিটি ৯টি সেলের সারি, প্রতিটি ৯টি সেলের কলাম ও প্রতিটি ৯টি সেলের ছোট গ্রিডে ১ থেকে ৯ সংখ্যা পর্যন্ত সব সংখ্যা থাকে। সেখানে সংখ্যার পুনরাবৃত্তি হবে না বা কোনো সংখ্যা বাদ পড়া যাবে না।

সুডোকু নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ নয়। বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন ‘ম্যাজিক স্কয়ার’ বা জাদুর বর্গ সম্পর্কে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। ১৭৫০ সালে তিনি ৮x৮ বর্গের একটি ম্যাজিক স্কয়ার প্রকাশ করেন। আঠারো শতকের সুইস গণিতবিদ অয়লার ল্যাটিন স্কয়ার বা বর্গ নিয়ে কাজ করেন। যেখানে প্রতিটি সারি ও কলামে একটি সংখ্যা বা অক্ষরের সেটের পূর্ণ তালিকা ছিল।

আমেরিকায় জন্ম নেয়া এই ধাঁধা ১৯৮৪ সালে জাপানে পৌঁছে যায়। সেখানে প্রকাশক নিকোলি এই ধাঁধার নাম দেন ‘সুডোকু’ অর্থাৎ একবারে এক সংখ্যা থাকবে। ১৯৯৭ সালে নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী ওয়েন গোল্ড সুডোকুর দেখা পান। ২০০৪ সালে তিনি সফলভাবে এই ধাঁধা প্রবর্তনের জন্য লবিং করেন। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে সুডোকুর জনপ্রিয়তা শুরু হয়। জাপানে নিকোলি ম্যাগাজিন সুডোকু নামটির ট্রেডমার্কের মালিক।

এবারের অমর একুশে বইমেলায় ‘প্রতিদিন সুডোকু’ নামের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। জাহিদ হোসাইন খানের রচনায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে ‘স্বপ্ন ৭১’ প্রকাশন থেকে। মূল্য ২৫০ টাকা। সুডোকুর আবির্ভাবের গল্প, জাদুর বর্গের বৈশ্বিক প্রেক্ষিত, সুডোকু বিশ্বকাপের নমুনা সুডোকু প্রকাশ করা হয়েছে বইটিতে।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply