আস্থাহীনতায় রোগীরা যাচ্ছেন বিদেশ

|

ভারতীয় ভিসা সেন্টারের সামনে লম্বা লাইন। যাদের অনেকের উদ্দেশ্য চিকিৎসার জন্য দেশটিতে যাওয়া।

আখলাকুস সাফা:

মর্জিনা বেগম, ভুগছেন মেরুদণ্ডের ব্যথায়। দেশের ভুল চিকিৎসায় আশাহত তিনি। তাই এখন পাশের দেশ ভারতে যাচ্ছেন মধ্যবয়স্ক এ নারী। সম্প্রতি তার সাথে কথা হয় ঢাকার ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের (আইভ্যাক) সামনে।

মর্জিনা বেগম বলছিলেন, চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথার ইনজকেশন নিয়ে সমস্যা আরও বেড়েছে। তার মতো অনেকেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আশাহত।

ভিসা সেন্টারের সামনে প্রতিদিন লম্বা লাইনে দাঁড়ানোদের মধ্যে অনেকেরই উদ্দেশ্য মেডিকেল ভিসায় ভারত যাওয়া। রোগীদের প্রত্যেকেই দেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু আর কোনোভাবে আস্থা রাখতে পারছেন না। খরচ করছেন অতিরিক্ত টাকা।

অথচ স্বাস্থ্যখাতে বছরে বছরে বরাদ্দ বাড়ছে। কিন্তু ফিরছে না রোগীদের আস্থা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসাপত্রে বড় তারতম্য দেখে উদ্বিগ্ন তারা। বাধ্য হয়েই চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন বিদেশে। রোগীদের বিদেশ যাওয়ার হার বেড়েছে গত ৩ বছরে। ধনীরা ইউরোপ, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোতে ছুটেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। যাদের সামর্থ্য কিছুটা কম তারা যান ভারতে। ১ বছরে ১০ লাখের বেশি মানুষ চিকিৎসা নিতে গেছেন দেশটিতে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, এখানকার চিকিৎসক ও হাসপাতালের সঙ্গে রোগীর ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। আস্থা তৈরি হয়নি। তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা হয়নি। রোগীর রোগ সম্পর্কে জেনে চিকিৎসা পদ্ধতি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও খরচ সম্পর্কে পরিষ্কার বুঝিয়ে না দেয়ার মতো বিষয় আছে। আর রোগীর জরুরি প্রয়োজন পড়লে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ও রয়েছে। এ রকম আস্থাহীনতার জন্য রোগী বাইরে চলে যাচ্ছে। যেটা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য দুঃখজনক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা ডা. বে নজীর আহমেদ বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে এসে রাজধানীতে চিকিৎসা নিতে যত খরচ আর ভারতে গেলে কত হবে তা কিন্তু বিবেচনা করে মানুষ। এটা কিন্তু মানতে হবে, কেউ অবিবেচকের মতো কাজ করে না।

অথচ, শুধুমাত্র সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারলেই এ পরিস্থিতি হতো না বলছেন এই চিকিৎসকরা। ডা. বে নজীর আহমেদ বললেন, উপজেলায় যদি ৮০ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সন্তুষ্ট করা যায়, তাহলে তাদের আর জেলায় আসতে হবে না। তখন তো ভারত যাবে না। সেক্ষেত্রে এই হার ধীরে ধীরে বাড়বে।

ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, রোগীকে সময় দেয়া, রোগ সম্পর্কে জানিয়ে রাখা, কত খরচ হবে, কতদিন সময় লাগবে এবং শেষ পরিণতি কী হবে তা আমরা বুঝিয়ে দিই না। এজন্য রোগীরা আমাদের ওপর আস্থা পায় না।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে চিকিৎসায় ২০১৯, ২০ ও ২১ সালে প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে বাংলাদেশিরা। উদ্বেগের বিষয়, এই খরচ বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এর মূল কারণ, সরকারি হাসপাতালে নেই কাঙ্ক্ষিত সেবা। এ সুযোগে দৌরাত্ম্য বেসরকারির। স্বাস্থ্যখাতের এ বাণিজ্য রাজধানী থেকে একেবারে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত। এতে ভুক্তভোগী হচ্ছেন রোগীরা।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply