রোগীর স্বাস্থ্যের ইতিহাস না জেনে অদক্ষ হাতে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগের কারণেই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের মতে, অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এটি প্রয়োগের আগে অবশ্যই রোগীর পারিবারিক রোগ, অ্যালার্জি ও ওষুধ ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। এসব না জেনে এনেস্থেশিয়া প্রয়োগ করা হলে ভয়াবহ বিপত্তির আশঙ্কা থাকে।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, মানবদেহের যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম রয়েছে এর প্রত্যেকটিই মূল্যায়ন করতে হবে। এরপর পরিস্থিতে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, এ দেশের প্রেক্ষাপটে সার্জনরা রোগী নির্বাচন করে থাকে। এরপর সার্জন আমাদেরকে ডাকে। সেক্ষেত্রে অ্যানেসথেসিওলজিস্টের সাথে রোগীর কোনো সম্পর্কই থাকে না।
এদিকে, দেশের হাসপাতালগুলোতে দক্ষ অ্যানেসথেসিওলজিস্টের ঘাটতিও এরকম দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে প্রায় ১১০০ জন বিশেষজ্ঞ অ্যানেসথেসিওলজিস্ট রয়েছে। তবে চাহিদা প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার। এদিকে বেসরকারি হাসপাতেলের চিত্র আরও ভয়াবহ। পাশাপাশি অবমূল্যায়নের কারণে নতুন অ্যানেসথেসিওলজিস্টরাও আগ্রহ দেখান না বলে জানান তারা।
জাতীয় ক্যান্সার ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা মো আসাদ হোসেন বলেন, পশ্চিমা বিশ্বে অ্যানেসথেসিওলজিস্ট বিশেষজ্ঞদের খুব বেশি মূল্যায়ন করা হয়। কিন্ত আমাদের দেশে কম গুরুত্ব দেয়া হয়।
অন্যদিকে চিকিৎসায় সুনাম কুড়ানো বিশ্বের অন্যান্য দেশে সার্জারির আগে রোগীর সাথে এর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে বাংলাদেশে এমন চর্চা খুব একটা দেখা যায় না। এমনকি রোগীকে ঝুঁকির বিষয়গুলোও বলা হয় না। বেশিরভাগ রোগীর অভিযোগ, অপারেশন টেবিলেই তাদের সাথে অ্যানেসথেসিওলজিস্টের প্রথম সাক্ষাৎ হয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার পুরো প্রক্রিয়াটি বলবৎ করতে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করার ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে।
এমন বাস্তবতায় এই খাতে শৃৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছার পাশাপাশি নিয়মিত তদারকি, শৃঙ্খলার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
আরএইচ/এটিএম
Leave a reply