ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কী? কেন এতো বিতর্ক?

|

নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ঘোষণা দেয়। এরপর ২০১৯ সালে লোকসভায় আইনটি পাস হলেও তা কার্যকর হওয়া নিয়ে ছিল নানা বিতর্ক। তবে সব বিতর্ক পাশ কাটিয়ে সোমবার (১১ মার্চ) কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে আইন কার্যকর করেছে। কিন্তু এখনও এ আইন নিয়ে সেদেশের অনেকেরই ধারণা কম। তবে জেনে নেয়া যাক সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ কী? আর কেনই বা এই আইন নিয়ে এতো বিতর্ক।

সংশোধিত এই আইনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে যারা ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে গিয়েছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

আইনে উল্লিখিত দেশগুলো থেকে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হলেও মুসলমানদের কথা নেই। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই মুসলমানরা এই আইনের আওতায় নাগরিকত্বের জন্য অনুপযোগী।

সিএএ কার্যকরের আগে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়ে ধর্মের কোনো ভূমিকা ছিল না। ধর্মীয় কিংবা জাতিগত সহিংসতার শিকার যে শুধু উল্লিখিত ধর্মের মানুষ হয়েছেন, এমন নয়। পাকিস্তানের আহমাদিয়া, আফগানিস্তানের হাজারা এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীও সহিংসতার শিকার হলেও তারা এ আইনের কোনো প্রকার সুবিধাভোগী হবেন না।

২০১৯ সালে আইনটি পাশ হওয়ার পরপরই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিবৃতি দেয়। তারা দাবি করে, আইনটিতে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। এছাড়া সোমবার আইন কার্যকর করে বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা জানায়, আইনটি ভারতের সাংবিধানিক মূল্যবোধের বিপক্ষে এবং বৈষম্যমূলক। বলা হয়, এই আইনের দ্বারা, ধর্মের মাধ্যমে বৈষম্যকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার তামিলদের, নেপাল এবং ভুটানের মতো দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে বলেও অ্যামনেস্টি তাদের পোস্টে উল্লেখ করে।

এবার জানা যাক, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে কী বলা হয়েছিল? আইনে ছিল, নাগরিকত্ব পেতে টানা এক বছর ভারতে থাকতে হবে। এ ছাড়াও বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশোধিত আইনে সেই ১১ বছরের সময় কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে।

সিএএ কার্যকরের বিপক্ষে মূলত মোদি বিরোধী রাজ্য সরকারগুলো। শুরু থেকেই এ সংশোধনী কার্যকরের বিরোধিতা করে আসছেন তারা। আপত্তি প্রথমে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে ওঠা শুরু করে। তারা আশঙ্কা করছেন, আইন কার্যকর হলে, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে শরণার্থীদের ভিড় আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে ভাষা ও সংস্কৃতিগত সমস্যা সেখানে আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

এছাড়া সিএএ বাতিলের আন্দোলনের পক্ষে বরাবরই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তার যুক্তি, নাগরিকত্ব দেয়াই যদি কেন্দ্র সরকারের আসল লক্ষ্য হয়, তবে নতুন আইনের প্রয়োজন কেন পড়ছে? পাশাপাশি, আইনে মুসলিমদের বাদ দেওয়া নিয়েও আপত্তি তার।

এদিকে ভারতের মুসলমানদের একটা বড় অংশের আশঙ্কা, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে সেইসব দেশের সংখ্যালঘু মানুষদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে, আর তার পরে মুসলমানদের চিহ্নিত করে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হতে পারে।

তবে এ বিষয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার সোমবারই এক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতি অনুসারে স্বরাষ্ট্রণালয়ের দাবি, কারও নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কা নেই। সিএএ-এর কারণে কোনও মুসলিমের (এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের) ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই আইনের ফলে তাদের নাগরিকত্বে কোনও ধরনের প্রভাব পড়বে না। বরং কোনও ভারতীয় নাগরিককে এই আইনের পরে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণে আর নতুন করে কোনো নথি দেখাতে হবে না।

২০১৯ সালে আইনটি পাশ হওয়ার পর গোটা ভারতজুড়েই শুরু হয় তুমুল প্রতিবাদ আন্দোলন। সেসময় নয়াদিল্লিতে সহিংসতায় নিহত হন ১০০ জনের বেশি মানুষ। এছাড়া আহত হন আরও শতাধিক।

এটিএম/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply