ঢাকার বসিলা মোড়ে চাঁদাবাজি: প্রতি মাসে তোলা হয় কয়েক কোটি টাকা

|

আশিক মাহমুদ:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা তিন রাস্তার মোড়ে চাঁদাবাজি যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে। গাড়ির স্ট্যান্ড ও ফুটপাত থেকেই মাসে কয়েক কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। প্রতিটি লেগুনাকে দিনে ৮শ’ টাকা দিতে হয়। চাঁদা আদায়ের এমন ব্যস্ততার দৃশ্য ধরা পড়েছে যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরায়। আবার ক্যামেরা দেখে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে।

অথচ মোহাম্মদপুরের বসিলা তিন রাস্তার মোড়ের পাশেই রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনারের কার্যালয়। এই মোড়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাদের চোখের সামনেই চক্রটি প্রতিদিন এই মোড় থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা তোলে। অজ্ঞাত কারণে পুলিশ সদস্যরা এটি দেখেও না দেখার ভান করেন।

অনুসন্ধানের সূত্রে সম্প্রতি সেখানে গিয়ে মোড়েই বাইকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার দৃশ্য দেখা যায়। এক যুবক অতি ব্যস্ততায় চাঁদা তুলছে। যেন তার দম ফেলার সময় নেই। পাশের সিএনজি স্ট্যান্ডেও একই চিত্র। সেখানে চাঁদা তুলছে আরেকজন। কীভাবে জানা যাবে চাঁদা আদায়কারীদের পরিচয়? কিছুটা কৌশলী হয়ে তা জানার চেষ্টা চালাই।

সংবাদকর্মী দেখে এবার তাদের মধ্যে আতঙ্ক! একটু আগেও যারা বীরদর্পে চাঁদা তুলছিলেন, তারা টেলিভিশনের ক্যামেরা দেখেই দিলেন দৌড়। এমনকি দৌড় দিতে গিয়ে চাঁদার টাকাও ফেলে যান তারা।

ক্যামেরা দেখে এভাবেই দৌড় দেন চাঁদা তোলা যুবক।

কিন্তু তাদেরকে কেন চাঁদা দেন বাইকাররা? রাইড শেয়ার করা এক বাইকার বলেন, এখান থেকে যাত্রী তুললেই তাদের ১০ টাকা দেয়া লাগে। অপর একজন বলেন, টাকা না দিলে এখানে দাঁড়াতে দেয় না চাঁদাবাজরা।

শুধু বাইক নয়, চাঁদা দিতে হয় সব যানবাহনের জন্য। বেড়িবাঁধ রুটে ১৪ সিটের যাত্রীবাহন যেসব লেগুনা চলে সেগুলো দিনে প্রায় ১৪শ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এর মধ্যে বসিলা মোড়েই কেবল দিতে হয় ৮শ’ টাকা।

এক লেগুনা চালক বলেন, গাড়ি চালাতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্তরে ১ হাজার ৪৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। অপর এক চালক জানান, টাকা না দিলে গাড়ি চালাতে দেয় না চাঁদাবাজরা। এছাড়া বাস, লাইনের সিএনজি, অটোরিক্সা থেকেও মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলা হয় প্রতিদিন।

চাঁদা প্রদানকারীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন একটি চক্র এই মোড়ে অন্তত ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। যা মাসিক হিসেবে প্রায় তিন কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এসব টাকার ভাগ চলে যায় ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যের পকেটে।

বিষয়টি নিয়ে মোহাম্মদপুর থানা ও তেজগাঁও বিভাগের ডিসি কথা বলতে রাজি হননি। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধতন কর্মকর্তারা জানান, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিনন বলেন, এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড আমরা করতে দেব না। কোনোভাবেই এটি সহ্য করা হবে না। যদি কেউ তা করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের গ্রেফতার করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply