সনাতন ক্যালেন্ডারে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম, ছুটির তালিকা পরিবর্তনে সুযোগ রাখার তাগিদ

|

প্রতীকী ছবি।

আহমেদ রেজা:

গৎবাঁধা পদ্ধতিতেই হয়ে আসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক একাডেমিক ক্যালেন্ডার। প্রতিবছর পাঠদানের জন্য নির্ধারিত ১৮৫ দিন। গ্রীষ্ম আর শীতকালীন ছুটিও প্রতিবার দেয়া হয় একই সময়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সনাতন ধারণা বাদ দিয়ে ছুটির সময় পরিবর্তনের সুযোগ রাখা উচিত। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা সাজাতে আবহাওয়া সম্পর্কিত সব তথ্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে তৈরি করতে হবে একাডেমিক ক্যালেন্ডার।

বিশেষ করে এবার ঈদের পর স্কুল-কলেজ খোলার পর নানা বিতর্ক আসে তীব্র দাবদাহে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাঠাদান নিয়ে। ২৯ এপ্রিল একবার মাধ্যমিক স্কুল খোলার কথা বলা হয়, আবার বলা হয় বন্ধ। তবে প্রাথমিকে ক্লাস নেয়া হয়। দ্বিধায় পড়েন শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা। এর মধ্যে তীব্র দাবদাহে আদালত থেকে স্কুল-মাদরাসা বন্ধের নির্দেশনা আসে।

প্রশ্ন হলো, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় একাডেমিক ক্যালেন্ডারে যে গ্রীষ্মকালীন নির্ধারিত ছুটি থাকে, তা গেলো কোথায়?

শিক্ষাক্রম বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, এক বছরে বাচ্চারা ১৮৫ দিন স্কুলে যাবে এবং এর মধ্য দিয়ে তাদের কর্মদিবস শেষ হয়ে যাবে। বাকি ১৮০ দিনে সব ছুটি কিন্তু যুক্ত আছে। ১৮০ দিন যদি নির্ধারিত করা হয়, তাহলে উপযুক্ত বিবেচনায় ছুটির সময় এদিক-সেদিক করা যায়। গরমকাল কিন্তু আপদকালীন সময়, এটা সবসময় থাকবে না। গরম চলে গেলে আবার শিক্ষা ক্যালেন্ডারে ফেরা যায়।

শিক্ষা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের গ্রীষ্মকালীন ছুটি এরইমধ্যে শেষ। আর প্রাথমিক স্কুল আর মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ছুটি আসছে জুনে। একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরিতে আসলে কি প্রকৃতির হালচালের কথা ভাবা হয়, আদৌ কি নেয়া হয় আবহাওয়া অধিদফতরের পরামর্শ।

আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানান, গ্রীষ্মকালীন ছুটির জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয় না। এবার যখন স্কুল ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হলো, তখন তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাপমাত্রার পূর্বাভাস নেয়া হয়েছে।

পরিবেশ ও জলবায়ু নীতি বিশ্লেষক ও চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম জাকির হোসেন খান বলেন, শিক্ষা ক্যালেন্ডার সেটা যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোক, অবশ্যই তাকে আবহাওয়া অফিসের অনুমোদন নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে যারা আবহাওয়ারা দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস দেয় তাদের সাথেও যোগাযোগ করতে হবে। যেমন, গতবছর পূর্বাভাস করা হলো, তাহলে এ বছর কেন শিক্ষা ক্যালেন্ডারে সমন্বয় করা হলো না?

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মন্ত্রণালয়গুলোর মাঝে সমন্বয় করে ক্যালেন্ডার তৈরে হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ ও সময়োপযোগী হবে।

ড. মোহাম্মদ নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও শিক্ষা সংক্রান্ত দুইটা মন্ত্রণালয় আছে কি না আমার জানা নেই। শিগগিরই দুইটিকে সমন্বয় করতে হবে। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একরকম বার্তা আসে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আসে আরেক রকম। তাতে বাচ্চারা বিভান্ত্র হয়ে পড়ে।

অবশ্য এরইমধ্যে শিক্ষাবর্ষের ক্যালেন্ডার তৈরিতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়ার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ বছর বিভিন্ন জায়গায় আবহাওয়ার নমুনা পরিবর্তন এসেছে। আমাদের শিক্ষা ক্যালেন্ডারটা স্থির থাকা কঠিন। তাই ক্যালেন্ডার পরিবর্তন হবে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply