রাসেল আহমেদ:
রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভীড় লেগেই থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভীড় হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক রোগী শেষ ভরসা হিসেবে ছুটে আসেন এখানে। তেমনই একজন লক্ষীপুরের নুরুজ্জামান।
ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন তিনি। একদল চিকিৎসক প্রায় প্রতিদিনই তার শরীরে পরীক্ষা করেন। দশ থেকে বারো জন চিকিৎসক একই পরীক্ষা ও প্রশ্ন করেন তাকে। গায়ে এপ্রোন না থাকলেও গলায় স্টেথোস্কোপ দেখে রোগীরা তাদেরকে ঢামেকের চিকিৎসক ভাবেন। বারবার একই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলেও এটাকেই চিকিৎসা পদ্ধতি ভাবেন নুরুজ্জামান।
নুরুজ্জামান জানান, দশ থেকে বারো জন করে একেকটি দল এসে তাকে পরীক্ষা করলেও চিকিৎসার বিষয়ে তেমন কিছু বলে না। শফিউদ্দিন নামে এক রোগী জানান, দিনে পাঁচ থেকে দশটি দল পরীক্ষা করতে আসেন। এরা হাসপাতালের কেউ নন বলেও ধারণা তার।
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, যারা রোগীদের একই প্রশ্ন বারবার করছেন বা পরীক্ষা করছেন তারা কারা? জানা যায়, ঢাকা মেডিকেলে এ সকল ডাক্তাররা বিদেশি ডিগ্রির (এমআরসিপি) ব্যবহারিক ক্লাস করছেন। তারা ১৫ হাজার টাকা ফি দিয়ে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছেন। একদল চিকিৎসক এগুলো পরিচালনা করেন।
এ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, রোগীরদের রোগের ইতিহাস কয়েকজনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। সিনিয়ররা এই সুযোগ না দিলে চিকিৎসকরা শিখবে কোথায়, এমন প্রশ্ন তার।
কোচিং সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যানের প্রধান অধ্যাপক ডা. আসাদুল কবির অবগত রয়েছেন। তবে একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দেখা করেননি তিনি। মুঠোফোনে যমুনা টেলিভিশন শুনে ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন।
ঢামেকের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বললেন, বাণিজ্যিক কোনো প্রতিষ্ঠানকে এমন কার্যক্রমের অনুমতি দেয়া হয়নি। রোগীদের ব্যবহার করে ঢাকা মেডিকেলে ব্যবসার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সিন্যাপস, জেনেসিস, এসএস একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মেডিকেল উচ্চতর শিক্ষার কোচিং ব্যবসা করে। একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস হয়।
কোচিংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণত ক্লিনিক্যাল ক্লাসগুলো হয়ে থাকে। ক্লাসগুলোতে ওইসব হাসপাতালের চিকিৎসকরা থাকেন।
এসএস একাডেমির কর্মকর্তা রাহুল বিশ্বাস বলেন, এখানে সিনিয়র চিকিৎসকরা হাতে-কলমে শিখিয়ে থাকেন। সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে এই সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা বলছেন, উচ্চ শিক্ষায় সহায়তার নামে সরকারি হাসপাতাল বা রোগী ব্যবহার করা বেআইনি।
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো রাশিদুল হাসান, এক্ষেত্রে প্রথমে চিকিৎসক রোগীকে তার পরিচয় প্রদান করবেন। এরপর রোগীর অনুমতি নিয়ে তার পরীক্ষা করতে হবে। অনুমতি ব্যতীত এটি করার সুযোগ নেই। শেখার কোনো বিকল্প নেই। তবে তা যেন নৈতিকতা বিবর্জিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এমন কর্মকাণ্ড বিপুল রোগীর চাপে থাকা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট করবে বলেও জানান জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা।
/আরএইচ/এমএন
Leave a reply