শরিফুল ইসলাম খান:
রাজপথে কর্মসূচির সময় বিএনপির অনেক কর্মীর ধারণা ছিল, এই দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র কিছু একটা করবে বলে বিশ্বাস ছিল তাদের। ২৮ অক্টোবরের পর দলটির নেতারা গ্রেফতার হতে থাকলেও কারও কারও মাঝে এই ধারণা বিরাজমান ছিল।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রত্যাশার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যের সাদৃশ্য ছিল। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে সাংগঠনিক সক্ষমতা দরকার। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তিই প্রধান নিয়ামক। বিদেশি বন্ধুরা সমর্থন করতে পারে, কিন্তু তারা এই পরিবর্তনের নিয়ামক হতে পারে না।
ভারত ও রাশিয়ার সাথে বরাবরই ভালো সম্পর্ক আওয়ামী লীগের। নির্বাচনের আগে চীনের অবস্থানও দলটির পক্ষে গেছে। ভোটের সময় কিছুটা নিরব ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থায় স্বস্তিতে আছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এমন বাস্তবতায় কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, বিএনপি ও তার মিত্ররা তাহলে কি বিদেশি বন্ধুহীন হয়ে পড়লো?
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফাহিমা নাসরিন মুন্নী বলেন, বিএনপির বন্ধু সবাই; যারা গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছেন… তারা সবাই বিএনপির বন্ধু।
বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আগের এবং বর্তমান অবস্থানের মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। আগেও যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছে। বর্তমানে আরও শক্তভাবে এ বিষয়ে কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই সরকার বদলে ফেলার ইঙ্গিত দেয়নি।
বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলোর দাবি, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা রাশিয়া কারও স্থায়ী শত্রু বা মিত্র নয়। দেশগুলোর নিজেদের স্বার্থের সাথে বন্ধুত্বের মানদণ্ড আবর্তিত হয়।
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের নানান দিক থাকতে পারে। এমনও হতে পারে তারা হয়তো চাচ্ছিল, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি বা গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করি। আবার এটাও হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সরকার বদলাতে চাচ্ছিল, কিন্তু ভারতের হস্তক্ষেপে তা পারেনি। রাজপথে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা গেলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এমন থাকতো না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ফাহিমা নাসরিন মুন্নী বললেন, বিএনপি বিদেশি বন্ধুর ওপর ভর করে রাজনীতি করে না। দলটি জনগণের শক্তির ওপর ভর করে রাজনীতি করে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, জাতিসংঘের ১৮১টি দেশেই নীতি বদল করে কূটনীতি চালায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বাস্তবতা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
তিনি আরও বলেন, প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবতা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। তবে এর অর্থ এই নয়, তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
তবে, বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, বিএনপির ন্যায়সংগত আন্দোলনে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো পাশে থাকবে।
/আরএইচ/এমএন
Leave a reply