কীভাবে শত কোটির মালিক হন সরকারি কর্মকর্তারা!

|

সাবেক আইজিপি বেনজীর ও অতিরিক্তি ডিআইজি রফিকুল

আলমগীর স্বপন:

বেতন-ভাতা যত, সম্পদ এর চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি। চাকরি করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের মতো প্রশাসন-পুলিশে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা নেহায়েত কম না। আসলে সরকারের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা চাকরিজীবনে কত সম্পদের মালিক হতে পারেন? ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবী শীর্ষ একজন কর্মকর্তা মাসে বেতন-ভাতা মিলিয়ে পান ১ লাখ ১৫ হাজারের মতো। আর পেনশনের হিসাব কষলে সর্বোচ্চ সম্পদের পরিমাণ দেড়-দু’কোটি টাকা হতে পারে।

তাহলে সরকারি চাকরিজীবীরা কীভাবে এত সম্পদের মালিক বনে যান? প্রশাসনে সৎ হিসেবে পরিচিত সাবেক আমলারা বলছেন, চাকরি করে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন সম্ভব না। পেনশনের টাকায়ও আলিশান এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টের মালিক কিংবা বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হওয়া সম্ভব নয়।

বিষয়টির ধারণা দিয়ে সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, একজন সচিব বা সিনিয়র সচিব কিংবা আইজিপি সবমিলিয়ে মাসে এক লাখ ১০ থেকে ১৫ হাজারের বেশি পান না। এরমধ্য থেকে আবার প্রভিডেন্ট ফান্ড কেটে নেয়া হয়। যদি কঞ্জুস অবস্থায়ও জমা রাখে তারপর তার পেনশন সোয়া এক কোটির বেশি হওয়ার কথা না। এই টাকা দিয়ে তো অবসরের পর ভালো জায়গায় একটি অ্যাপার্টমেন্টই কেনা সম্ভব না।

অথচ আলোচিত সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ আয়ের চেয়ে কয়েকশ গুণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। একই সময়ে অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলামের শত কোটি টাকার সম্পদের তথ্যও চাউর হয়েছে। পুলিশে-প্রশাসনে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা কম নয়, যাদের সম্পদ বেতন-ভাতার চেয়ে শতগুণ বেশি। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলছেন, কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সম্পদের অস্বাভাবিক তথ্যে দুর্নীতি রোধে নতুন করে অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতিমুক্তভাবে কীভাবে কাজ করবেন তার জন্য প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন। যার নামে যেসব অভিযোগ পাওয়া যাবে সেগুলো নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে। কে কার পরিচিত বা আত্মীয় কিংবা কোন পদে চাকরি করেছে সেসব দেখা যাবে না। এখানে কেউ প্রভাব বিস্তার করবে না। এটিই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন অনুশাসনের পরও প্রশ্ন আছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ জমা এবং এর যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে। এবিষয়ে সাবেক সচিব আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী কী সম্পদ আছে সেগুলো প্রতিবছর দাখিলের ব্যবস্থা থাকা উচিত। এরপর সেগুলো খোঁজ করেও দেখা প্রয়োজন। তা না হলে শুধু সম্পদের হিসাব দাখিলের নিয়ম করে কাজে আসবে না।

দুর্নীতিতে লাগাম ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন বা এসিআরের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনও আনছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। এবিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারি চাকরির যে আইন সেখানে পাঁচ বছর পর পর কর্মজীবীরা তাদের হিসাব দেবে। কারও নামে যদি অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের তথ্য আসে সেগুলো অভিযোগের ভিত্তিতে প্রসিডিউর হয়।

তিনি বলেন, আমরা এসিআরে পরিবর্তন আনছি। কর্মকর্তাদের সততার বিষয় যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে সেটি সেখানে চলে আসবে। এটি আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৫ বছরে প্রশাসনের সোয়া তিনশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply