নুরুজ্জামান খান:
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮ রানের হার দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করেছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্ব ও সুপার এইট মিলিয়ে সাত ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। জয় পেয়েছে তিনটি, বিপরীতে হার চারটি। এরমধ্যে বড় দল ছিল শুধুই শ্রীলঙ্কা। নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষই বলা যায়।
প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। মঙ্গলবারের ম্যাচে আফগানিস্তানের ১১৫ রান ১২ ওভার ১ বলে টপকাতে পারলেই হতো ইতিহাস। সেটি তো হয়নি উল্টো ১০৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। অথচ বোলাররা সহজ লক্ষ্য দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ব্যাটারদের সামনে। সেটি কাজে লাগাতে পারেননি ব্যাটাররা। বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশের তিনটি জয়ই এসেছে বোলারদের কারণে। এসব জয়ে ব্যাটারদের চেয়ে বোলাররাই বেশি বাহবা পাবেন। আর প্রতিটি ম্যাচেই ব্যাটারদের হতশ্রী পারফরম্যান্স তো রয়েছেই।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স বিশ্বকাপ থেকে নয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ, জিম্বাবুয়ে সিরিজেও দেখা গেছে। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের সিরিজের শেষ ম্যাচেও দেখা মিলেছিল ব্যাটারদের বাজে আউট হওয়ার দৃশ্য। এর মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তাদের বিপক্ষে সিরিজ হার তো ছিলই। তারপর ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও ব্যাটারদের বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখা গেছে।
প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত আশ্বস্ত করেছিলেন, বিশ্বকাপের মূল খেলায় স্পেশাল কিছু করবেন। তার সেই ‘স্পেশাল’ কিছু তো দেখাতে পারেন-ই-নি উল্টো প্রায় সব ম্যাচেই উইকেট বিলিয়ে দলকে বিপদে রেখে এসেছেন।
শান্ত ব্যাটিংয়ে নেমেছেন তিন নম্বরে। যেটি দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পজিশন। কোনো ওপেনার ব্যর্থ হলে এই পজিশনে নামা ব্যাটারকে দলের হাল ধরতে হয়। আর তিনি যদি ক্যাপ্টেন হন তাহলে দায়িত্ব তো আরও বেশি।
শান্ত বিশ্বকাপের ৭ ইনিংসেই ব্যাটিংয়ে নেমেছেন। সবমিলিয়ে করেছেন ১১৩ রান। গড় ১৬-এর একটু ওপরে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই রান তুলতে শান্ত মোকাবেলা করেছেন ১১৭টি বল। অর্থাৎ টি-টোয়েন্টির মতো পাওয়ার ক্রিকেটের টুর্নামেন্টে ব্যাটিং করেছেন ১০০-এর নিচের স্ট্রাইক রেটে। অপরদিকে, পুরো টুর্নামেন্টে ছক্কা মেরেছে ৫টা আর চার মেরেছে মাত্র ৭টি।
অন্যদিকে, সাত ইনিংসের চারটিতেই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেনি অধিনায়কের ইনিংস। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩ বলে ৭ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৩ বলে ১৪, নেদারল্যান্ডসের সাথে ৩ বলে ১, নেপালের সাথে ৫ বলে ৪ আর সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৬ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন শান্ত। যেটি তার সর্বোচ্চ ইনিংসও। এছাড়া ভারতের সাথে ৩২ বলে ৪০ রানের ইনিংসও রয়েছে। আর সবশেষ রশিদ-নবীদের বিপক্ষে করলেন ৫ বলে ৫ রান।
শান্ত ব্যাটিংয়ে দলের জন্য অবদান রাখতে পারেননি। অধিনায়ক হিসেবে কোনো কোনো ম্যাচে দুর্দান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে বড় স্কোর গড়তে পারেননি, পারেননি ভালো স্ট্রাইক রেটেও ব্যাট করতে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই তার আউটের ধরন ছিল দৃষ্টিকটু। এরপরও হয়তো অধিনায়ক শান্ত বলবেন, তারা ফর্ম নিয়ে চিন্তিত নন। আবারও হয়তো আশ্বাস দেবেন, স্পেশাল কিছু করার। শান্তরা স্পেশাল কিছু করতে পারলেই তো দেশের ক্রিকেটেরও ‘স্পেশাল’ কিছু হতো।
/এনকে
Leave a reply