বারুদের ধংসস্তুপের মাঝে এক চিলতে আলো কাবুলের আকাশে। শত আঁধারেও যে আলো পথ দেখায় নতুন দিগন্তের। মৃত্যু যন্ত্রণা পেরিয়ে সেখানে লেখা হয় আনন্দ উল্লাসের গল্প। কষ্টের কান্নায় ভিজে যাওয়া মরু, প্রাণ ফিরে পায় আনন্দ অশ্রুতে। যুদ্ধের দামামা থামিয়ে শান্তির দূত হয়ে আসে আফগান ক্রিকেট।
এক সময় জুটতোনা দুবেলার খাবার। ছিলনা সবুজ ঘাসের মাঠ, টার্ফের উইকেট সেতো দুঃস্বপ্ন। সেখান থেকেই তিলে তিলে গড়া একটা স্বপ্ন। বাইশ গজের প্রতিটা বলে সেই স্বপ্নের সুতো ধরে একটু একটু করে এগিয়েছে আফগানিস্তানের ক্রিকেট। ব্যাট হতে সব প্রতিকূলতা আছড়ে ফেলেছে গ্যালারিতে।
২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে পদার্পন। ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে অভিষেক বিশ্ব আসরে। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও ওয়ানডের মর্যাদা পেয়ে গেছে ততদিনে। মোহাম্মদ নবির নেতৃত্বে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় আফগানিস্তানের। এরপর ২০১৭ সালে সাদা পোষাকের টেস্ট মর্যাদা।
কাবুল কিংবা কান্দাহারে বাঁধা হয়নি ঘর। ভারতের দেরাদুনে ভাড়া করা স্টেডিয়ামে চলেছে ক্রিকেটের সব পরাশক্তির সাথে লড়াইয়ের প্রস্তুতি। ২০২৩ এর ভারত বিশ্বকাপে সে লড়াইয়ে ছিল নতুন বার্তা। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস। প্রত্যেকটা জয়ে ছিল আফগানদের দাপট। রাশিদ নাভিনরা টুঁটি চেপে ধরেছিলো মাইটি অস্ট্রেলিয়ারও। সে যাত্রায় অজি বধ থেকে রক্ষা করেছিল অতীমানবীয় ম্যাক্সওয়েল। তবুও ১০ দলের বিশ্বকাপে শেষটা হয়েছিল ছয়ে।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের পেরোয়নি বারো মাসও। বিশ্ব মঞ্চে লড়াইটা এবার টি-টোয়েন্টির। গ্রুপ পর্বের প্রথম তিন ম্যাচ। উগান্ডা ও পাপুয়া নিউগিনিকে হারানোটা অবাক না করলেও ৮৪ রানের বড় ব্যবধানে কিউইদের হারানো নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য করেছিলো ক্রিকেট বোদ্ধাদের। প্রথমবারের মত সুপার এইটে উঠে ভারতের বিপক্ষে পরাজয়। তবে এরপর আসে প্রতিশোধের সেই রাত। কিংসটাউনে অস্ট্রেলিয়াকে ২১ রানে হারিয়ে চোখ তখন সেমিতে। দু’দিনের মাথায় পুরনো সেই বাইশ গজেই আফগানরা লিখলো নতুন রূপকথা।
অসুস্থ মাকে ঘরে রেখে আসা রহমানউল্লাহ গুরবাজ, শরণার্থী শিবির থেকে উঠে আসা গুলবাদিন নাইব, বিশ্বদরবারে নিজ দেশের পতাকা উড়িয়ে বেড়ানো সুপারস্টার রাশিদ খান কিংবা গোটা দেশের ক্রিকেটকে একাকী নাবিকের মতো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মোহাম্মদ নবী। ওদের হাত ধরেই জায়ান্ট কিলার তকমা পেরিয়ে, আফগানিস্তান এখন বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন জায়ান্ট।
/আরআইএম
Leave a reply