আন্তর্জাতিক অধ্যায় কি শেষ রোনালদোর

|

ইউসুফ ভূঁইয়া:

শেষবারের মত ইউরো কাপে খেলতে নেমেছিলেন। তবে হৃদয় ভেঙ্গেই ইউরো থেকে বিদায় নিতে হয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নও পূর্ণ হয়নি। নিজের দেশের পাবলিক ব্রডকাস্টার আরটিপিকে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই বলেছিলেন, এবারের ইউরোই তার শেষ। ফ্রান্সের কাছে পেনাল্টি শুটআউটে হেরে বিদায় পর্তুগালের। সেই সঙ্গে বিদায় সিআরসেভেনেরও।

তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী পেলের উচ্ছ্বসিত সঙ্গ কিংবা ফুটবল ঈশ্বর খ্যাত দিয়েগো ম্যারাডোনা ছায়া বা দীর্ঘদিনের চির প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে পথচলার সঙ্গী হিসেবে, তিনি সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে কোথায় আছেন তা নিয়ে বিতর্ক থাকবে চিরকাল। তারা সবাই বিশ্বকাপ জিতেছে, যা রোনালদো জিততে পারেননি। তবে জাতীয় দলের জার্সিতে পরিসংখ্যানের দিক থেকে ৩৯ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়ের রেকর্ডের শেষ নেই।

ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স ও পর্তুগাল। সেই ম্যাচেই নাটকীয়ভাবে পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে পৌঁছে গেল এমবাপ্পের ফ্রান্স। টাইব্রেকার শেষ হলো ফ্রান্সের পক্ষে ৫-৩ ফলাফলে। ফ্রান্সের সকলেই পেনাল্টি শুটআউটে জালে বল জড়ালেও পর্তুগালের হয়ে মিস করে বসেন জোয়াও ফেলিক্স।

টাইব্রেকারে প্ৰথম শটটাই জালে জড়ান রোনালদো। ম্যাচের ভাগ্য চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর তাকে আবেগরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পুরনো সতীর্থ পেপে আবেগে থরোথরো হয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে উপুড় করে দেন রোনালদোর জার্সিতে। মহাতারকা এরপরে দীর্ঘদিনের জাতীয় দলের সতীর্থকে সাময়িক সান্ত্বনা দিয়েই হাঁটা শুরু করেন ড্রেসিংরুমের পথে।

২০১৬ তে ইউরোর শিরোপা জিতেছিল পর্তুগাল। সেবার ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়েছিল তারা। শুক্রবার রাতে রোনালদোদের এই হারে যেন সেই বৃত্ত পূর্ণ হল। যে দলকে হারিয়ে তার পর্তুগালের চ্যাম্পিয়ন হওয়া, সেই দলের কাছে হেরেই রোনালদোদের বিদায়।

পর্তুগালের জার্সিতে এটাই রোনালদোর শেষ ম্যাচ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কোচ রবার্তো মার্টিনেজ বলেন, ম্যাচের পর এটা নিয়ে কথা বলার সময় হয়ে উঠেনি। তবে এখনো কোনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, রোনালদো জাতীয় দলের যোগ্য দাবিদার ,তার কারনেই সে খেলছে। এখন দলে অনেক তরুণ তাই দলে রোনালদোর প্রয়োজন আছে।

ভক্সপার্কস্টাডিয়নে ফ্রান্সের কাছে পরাজয়টি ছিল রোনালদোর ২১২তম ম্যাচ। পরিসংখ্যানের দিক থেকে ২০০৩ সালে পর্তুগালের হয়ে অভিষেক হওয়া রোনালদোর সমকক্ষ খুব কমই রয়েছে।

কাজাখস্তানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে লুইস ফিগোর বদলি হিসেবে হাফটাইমে মাঠে নামার সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর। কয়েকদিন পরেই তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে স্বাক্ষর করেছিলেন। প্রাক-মৌসুম প্রীতি ম্যাচে দলের রক্ষণভাগকে যন্ত্রণা দেওয়ার পরে তখনকার ম্যানেজার অ্যালেক্স ফার্গুসন তার অনেক সম্ভাবনা দেখেই ভিড়িয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে।

ছয়টি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা প্রথম কোন ফুটবলারসিআরসেভেন । ৩০ ম্যাচে তার ১৪ গোলও ইউরোর রেকর্ড। ২০১৬ সালের ফাইনালে যখন পর্তুগাল স্বাগতিক ফ্রান্সকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল, সেই ম্যাচে হাঁটুর ইনজুরিতে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন রন।

ইউরো বাছাইপর্বে রোনালদো গোল করেছেন ৫৫টি, বিশ্বকাপের ৫টি আসরে ২২ ম্যাচ খেলে ৮ গোল করেছেন। দেশের হয়ে ১৩০ গোল আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের শীর্ষে বসিয়েছে তাকে।

দেশের হয়ে ২১ বছর খেলে আসা রোনালদো পাঁচটি ব্যালন ডি’অর পুরষ্কার জয়লাভ করেছেন। এখনও এই যাত্রার আবসান ঘটেনি। তবে এখন দেখার পালা এখানেই কি রোনালদোর আন্তর্জাতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে কিনা। সময়ই হয়তো সেই উত্তর দিয়ে দিবে।

/এমএইচআর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply