জুলাই মাস কি ব্রাজিলের জন্য ‘কুফা’?

|

২০১৪ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ৭–১। ছবি: সংগৃহীত।

আহাদুল ইসলাম:

আজ কোপার চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে টাই ব্রেকারে ব্রাজিলকে ৪-২ গোলে হারিয়ে সেমিতে পৌঁছাল উরুগুয়ে। টুর্নামেন্টের অন্যতম ‘হট ফেভারিট’ টিম বাদ পড়ায় হতাশায় ব্রাজিলের সমর্থকরা। অথচ গ্রুপ পর্বে প্যারাগুয়েকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে বাকি সব টিমকে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছিলো সেলেসাওরা।

ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে সেলেসাওদের কোচ দরিভাল বড় মুখ করে বলেছিলেন, ‘ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে আবারও ভালো সময় আসছে।’

অনেক আর্জেন্টাইন ভক্তরা চির প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কোচের কথা শুনে রীতিমত ঠাট্টা মশকরা শুরু করেন। অনেকেই বলেন, ‘এক ম্যাচে ৪ গোল করে ভালো সময় চলে আসলো!

ভক্তদের কথা ফেলে দেয়ার মতো নয়। ব্রাজিল নিঃসন্দেহে প্যারাগুয়ের সাথে ভালো খেলেছে। কিন্তু এরপরের ম্যাচ ছিল কলম্বিয়ার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে, কলম্বিয়ার সাথে ১-১ গোলে ড্র করেই বাধে বিপত্তি।

যদি কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ব্রাজিল জিতে যেতো, তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালে সহজ প্রতিপক্ষ পেতো দরিভালের দল। তবে তা হলো না! লাখো সমর্থকদের কাঁদিয়ে এবারের কোপা আসর থেকে ছিটকে গেলো তারা। আর মাসটি সেই চিরচেনা জুলাই!

কেন জুলাই মাসই বলা হচ্ছে! সেজন্য ফিরে যেতে হবে ব্রাজিলের পূর্বের কিছু কালো অধ্যায়ে। ২০১৮ রাশিয়া ওয়ার্ল্ড কাপ। সেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে, ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল বেলজিয়াম। তখন পর্যন্ত দারুণ ছন্দে দলটি। নতুন করে নজরকাড়া সেই বেলজিয়ামের গতিময় ফুটবলের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে নেইমার, মার্সেলোদের দল। সময়টা কবে? ৭ জুলাই ২০১৮।

ব্রাজিলকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে বেলজিয়াম। ছবি: সংগৃহীত।

এখানেই গল্প শেষ নয়। আরও পিছে ফেরা যাক। ২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কাপ। সেবার স্বাগতিক হিসেবে ‘হট ফেভারিট’ সেলেসাওরা। সেমিফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ জার্মানি। ম্যাচের আগে সবাই ধরেই নিয়েছে জার্মানদের উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে যাবে ব্রাজিল। তবে কে জানতো, সেই দিন ব্রাজিলের ইতিহাসের অন্যতম বিভীষিকাময় দিন হতে চলেছে।

চোখের সামনেই হলো ৫টি গোল! তাও আবার ম্যাচের ২৯ মিনিটের মধ্যে। জার্মানি ৫, ব্রাজিল ০! বিশ্বকাপ ইতিহাসেই কোনো সেমিফাইনালের প্রথমার্ধে ৫ গোল হয়নি। 

২৩ মিনিটে মিরোস্লাভ ক্লোসা দ্বিতীয় গোল করার পরই পাশের গ্যালারিতে গায়ে হলুদ জার্সি, গালে জাতীয় পতাকা আঁকা এক তরুণীকে দেখা যায় হাউমাউ করে কাঁদতে। পরের ৭ মিনিটের মধ্যে জার্মানি আরও ৩ গোল করে ফেলার পর সেই কান্না সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মারাকানা স্টেডিয়ামে।

সেই ম্যাচে ক্লোসা, মুলার, ক্রুস এবং ওজিল; সবাই মিলে যেনো ব্রাজিলের সাথে মশকরা করছিলো। পাসিং ফুটবল দলগতভাবে কীভাবে খেলতে হয়, সেটাই যেন ব্রাজিলকে শেখাচ্ছিল জার্মানরা। বিশেষকরে, টনি ক্রুসের দ্বিতীয় গোলটি। ২৬ মিনিটে, ব্রাজিলের ডিফেন্ডারের থেকে বল কেড়ে নিয়ে আক্রমণে জার্মানরা। সেই গোলটি খুব সহজেই ৬ নম্বর জার্সির সামি কাদিরা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিঃস্বার্থভাবে বলটি পাস দেন ক্রুসকে। বল পেয়ে ভুল করেননি ক্রুস।

ডানতে’র কানে কানে কথা বলছেন টনি ক্রুস। ছবি: সংগৃহীত।

সেই ম্যাচের ব্রাজিলের অন্যতম আরেকটি ভুল ছিল ডানতে’কে ডিফেন্সে খেলানো। খুবই বিবর্ণ ছিলেন তিনি। অনেকই তাকে আরও ভালো ভাবে চিনবে, ২০১৪ ওয়ার্ল্ড কাপের এক বছর পর ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫-এ।

ডানতে ও গোলরক্ষককে পার করে শুট নিচ্ছেন রবার্ট লেভানডফস্কি। ছবি: সংগৃহীত।

সেদিন জার্মান ঘরোয়া লিগ বুন্দেসলিগায় বায়ার্ন মিউনিখের স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি বদলি হয়ে নেমেছিলেন উলফসবার্গের বিপক্ষে। ৯ মিনিটে রবার্ট ৫ গোল করে ইতিহাসে জায়গা করে নেন। সেদিন উলফসবার্গের ডিফেন্সে ছিলেন ব্রাজিলের ডানতে।

তবে শুধু ডানতে নয়। পুরো ব্রাজিল দলটি ছিল ছন্দহীন। তাই জার্মান টিম ভালভাবেই হারিয়েছে সেলেসাওদের। প্রশ্ন হচ্ছে, ২০১৪ ওয়ার্ল্ড কাপের সেমিফাইনাল কবে হয়েছে? সেই জুলাই মাসের ৮ তারিখ।

সব মিলিয়ে জুলাই মাসটি ব্রাজিল টিমের জন্য ‘অশুভ’ কিংবা ‘কুফা’! ব্রাজিল সমর্থকদের প্রশ্ন এখন এই মিডিওকোর দল নিয়ে কতদুর যাবে সেলেসাওরা। সময়ই তা বলে দিবে। তবে সব বাজে হারের দায় জুলাই মাসের ঘাড়ে চাপালে হবে না!

ব্রাজিলকে ফিরে আসতে হবে, সেই পূর্বের আর্ট ফুটবল নিয়ে, আরও শক্তিশালী হয়ে। নাহলে প্রত্যেক বছর জুলাই আসবেই! ব্রাজিলের জন্য ‘কুফা’ হয়ে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply