ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ আসলে একক কোন দেশ নয়। অনেকগুলো স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্রের সমন্বয়ে এই কনফেডারেশনটি গঠিত। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা তাদের যে দলকে খেলতে দেখি তারা সেই স্কোয়াডকে সাজান এরকম হরেক দেশ থেকে আসা ক্রিকেটারদের নিয়ে। তাই ভৌগলিক অবস্থানগত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলকে আমরা একটি রিজিওনাল কনফেডারেশনের চেয়ে ক্রিকেটীয় ধাঁচেই বেশি চিনে থাকি। এবার সেই অঞ্চলের সর্বোচ্চ সম্মাননা অর্ডার অব দা ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি (ওসিসি) পুরস্কার পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৬৬ থেকে ১৯৮৫ সাল, ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১১০ টেস্টে ১৯ সেঞ্চুরিতে ৪৬.৬৭ গড়ে ৭ হাজার ৫১৫ রান এসেছে লয়েডের ব্যাট থেকে। ৮৭ ওয়ানডে খেলে রান ৩৯.৫৪ গড়ে ১ হাজার ৯৭৭। ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন দারুণ আগ্রাসী, বোলারদের গুঁড়িয়ে দিতে তার জুড়ি ছিল না। তবে ক্রিকেটে তিনি সবচেয়ে বেশি ছাপ রেখেছেন অধিনায়ক হিসেবে। একটুর জন্য হ্যাটট্রিক বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের তকমাটা মিস হয়েছে তার। অধিনায়ক হিসেবে যেমন দুর্দান্ত কৌশলী ছিলেন, তেমনি ক্যারিবিয়ানের বিভিন্ন অঞ্চলের খ্যাপাটে-প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের এক সুতোয় গেঁথে একই মন্ত্রে উজ্জীবিত করার কাজটি তিনি করেছিলেন নিখুঁতভাবে। যা দলগতভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছে বারংবার।
তার নেতৃত্বেই ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ বিশ্বকাপ জয় করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমটির ফাইনালে ৮২ বলের বিধ্বংসী ইনিংসে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন তিনি, এখনও যেটিকে মনে করা হয় ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংসগুলির একটি। তার সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে রাজত্ব করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক পর্যায়ে টানা ১১ সিরিজ জয় ও টানা ২৭ সিরিজে অপরাজেয় থাকার অসাধারণ কীর্তি গড়ে ক্যারিবিয়ানরা। ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরা অধিনায়কদের একজন মনে করা হয় তাকে। খেলোয়াড়ি জীবন ছাড়ার পরও ক্রিকেট ছেড়ে যাননি লয়েড। ‘সুপার ক্যাট’ নামে পরিচিত তারকা পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যানেজার হয়েছে, কোচ হয়েছেন, নির্বাচক হিসেবে কাজ করেছেন।
সম্মানজনক এই পুরস্কার পেয়ে লয়েড তার উচ্ছ্বসিত মনের ভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আপনাদের মাঝে উপস্থিত থাকতে পেরে এবং আমাকে অর্ডার অব দা ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির যোগ্য হিসেবে বিবেচনায় করায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। এই অঞ্চলের প্রতি আমার কাজের জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি কিশোর শ্যালো উপস্থিত ছিলেন এই আয়োজনে। তার কথায় ফুটে ওঠে, ক্রিকেট ও ক্যারিবিয়ানের জন্য লয়েডের অবস্থান কোন উচ্চতায়। তিনি বলেন, এই সম্মান তার জন্য খুবই উপযুক্ত, যিনি শুধু ক্রিকেট মাঠেই উৎকর্ষের চূড়ান্ত উদাহরণ মেলে ধরেননি, বরং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ও গোটা বিশ্বের জন্যই প্রেরণা ও নেতৃত্বের অটুট এক স্তম্ভ। ক্রিকেটের প্রতি স্যার ক্লাইভের নিবেদন ও খেলাটির উন্নতিতে তার অবদান অতুলনীয়।
উল্লেখ্য, ক্লাইভের নিজ দেশ গায়ানা। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে আইসিসির হল অব ফেম-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাকে। ২০২২ সালে দেওয়া হয় ‘নাইটহুড’ উপাধি। নামের সাথে জুড়ে যায় ‘স্যার’ উপাধিও।
/এমএইচআর
Leave a reply