জামালপুর করেসপন্ডেন্ট:
জামালপুর শহরে বেসরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্যে শতাধিক দরিদ্র মানুষে ঘরবাড়ি ভেঙে জমিতে বালু দিয়ে ভরাট করে একটি গ্রামই মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত করে দেয় সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এবং তার অনুসারীরা।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের জামালপুর শহরের নয়াপাড়া পাঁচরাস্তা মোড় এলাকার একটি ভবনে ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়। ২০১৯ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় নাওভাঙ্গাচর এলাকা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
ওই ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্যে নাওভাঙ্গাচরের প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ করে ভুক্তভোগীরা। হাসিনা সরকার পতনের পর আজ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরে তাদের বিচার দাবিতে দখলকৃত জমিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে নাওভাঙ্গাচরের সর্বস্তরের জনগণ। এই কর্মসূচি থেকে এসব অভিযোগ জানান ভুক্তভোগীরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নাওভাঙ্গাচরের সাধারণ নিরীহ মানষের জমি জবরদখল এবং তাদের বাস্তহারা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের দখলকৃত জমি ফেরত, ক্ষতিপূর্ণ ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে তারা।
আবুল কালাম নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, জামালপুর শহরের ফৌজদারি মোড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরঘেঁসে নাওভাঙ্গাচরের অবস্থান। সেখানে প্রায় ৪০ বছর ধরে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করছিলেন। ওই গ্রামের পশ্চিম অংশটুকু নদীতে ভেঙে যায়। বর্ষায় পানি থাকলেও শুকনো মৌসুমে সেখানে বালুর চর থাকতো। ২০১৯ সাল থেকে হঠাৎ করেই ওই জেগে উঠা বালুর চলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্যে বালু ভরাট শুরু হয়। ভরাটের এক পর্যায়ে পূর্বপাশের নাওভাঙ্গাচরের দরিদ্র বাসিন্দাদের জমিতেও বালু ফেলতে শুরু করা হয়। তারপর থেকে ওই এলাকার দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে জমিগুলো দখলে নেয়া হয়। কেউ যেতে না চাইলে তাকে মামলার ভয় দেখানো হয় সেই সাথে নানা নির্যাতন করা হয়।
আব্দুল হালিম নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, মির্জা আজমের নির্দেশে জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ওরফে ছানুর তত্ত্বাবধানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মারধর, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, নানা রকম অত্যাচার-নির্যাতন করে জমিগুলো দখল করে। যারা সহজেই জমি ছাড়েনি, তাদের ওপর প্রায় প্রতিদিন ব্যাপক মানষিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হতো। জমির কোনো টাকাও দেয়া হয়নি। ওই সময় আমাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। পুলিশ দিয়েও ব্যাপক হয়রানি করা হয়। দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্যে বালু ফেলে ভরাট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা জমি ফেরত ও ক্ষতিপূর্ণ চাই।
এক নারী ভুক্তভোগী বলেন, আমাদের এই নাওভাঙ্গাচর নামের গ্রামটিতে প্রায় সাড়ে ৫০০ ভোটার ছিলো। আমরা এতোগুলো পরিবার ছিলাম সেখানে। কিন্তু এই দুই তিন বছরে সবাইকে তাড়িয়ে দেয় তারা। একজনকে মামলা দিয়ে জেলেও দেয়। এখানে এক মুক্তি যোদ্ধার কবর ছিলো সেটিকে তারা বালু দিয়ে চাপা দেয়। এছাড়া নদীর জায়গা ও আমাদের জায়গা নিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ একর জমি তারা দখল করে এবং একটি ব্রিজ থাকতেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আরেকটি ব্রিজ করা হয়।
এ বিষয়ে জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো.শফিউর রহমান বলেন, ওই এলাকায় যারা জমি হারিয়েছেন-বলে অভিযোগ করছেন। তারা যদি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো এবং সেখানে যদি তাদের জমি থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
/আরআইএম
Leave a reply