কলকাতায় নারী চিকিৎসক ঘটনার তদন্তে নতুন মোড়, মমতার সঙ্গে ছাত্রদের বৈঠক বিফলে

|

সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়,কলকাতা প্রতিনিধি:

৩৭তম দিনে পৌঁছেছে কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের আন্দোলন। গতকাল সারাদিন নানা নাটক ও উত্তেজনায় কাটে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের রাজনীতি। নতুন করে গ্রেফতার হওয়ায় তদন্তের মোড় ঘুরে যায় অন্য পথে।

স্থানীয় সময় শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আচমকাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির হন সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিক্ষোভরত ডাক্তারি পড়ুয়াদের আন্দোলন মঞ্চে। সেখানে ছাত্রদের আন্দোলন মঞ্চ থেকেই আলোচনার ডাক দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন তার প্রশাসনিক ও পুলিশের কর্তারা।

সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাটে নিজের বাসায় ফেরেন। আন্দোলনরত ছাত্ররা জানান, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে তারা কিছুক্ষণের মধ্যে জানাচ্ছেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে তার বাসভবনে পৌঁছান বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।

নবান্নের পুনরাবৃত্তি কালীঘাটে, ভেস্তে গেল মুখ্যমন্ত্রী-আন্দোলনকারী বৈঠক। দুই পক্ষের অনড় মনোভাবের কারণে ফের ভেস্তে গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যেকার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক।

গত বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের সচিবালয় কার্যালয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লাইভ সম্প্রচারের দাবিতে অনড় ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাতে আপত্তি জানিয়েছিলো সরকার পক্ষ। ফলে বৈঠক ভেস্তে যায়।

এরপর গতকাল, দুই পক্ষের চিঠি চালাচালির পর কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে দ্বিতীয়বারের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অবিরাম বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই এ দিন সন্ধ্যায় মমতার বাড়িতে পৌঁছে যান জুনিয়র চিকিৎসকদের এক প্রতিনিধি দল। সাথে ছিলেন দুজন ভিডিওগ্রাফার-ও। বৃষ্টির মধ্যে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন তারা। বেশ কিছুটা সময় পর মুখ্যমন্ত্রী ঘরের বাইরে বেরিয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের ভিতরে ডাকেন। চিকিৎসক প্রতিনিধিদলকে ভেতরে আসার অনুমতি দিলেও দুইজন ভিডিওগ্রাফারকে ভিতরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে দাবি তোলা হয় সরকারের পাশাপাশি তাদের তরফেও আলাদা করে ওই বৈঠকের ভিডিও করে রাখা হবে। কিন্তু তাতেই আপত্তি জানান মুখ্যমন্ত্রী।

এ সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘আমি তোমাদের কাছে হাতজোড় করে বলছি তোমরা ভিতরে আসো। তোমরা ভিজবে না। তোমাদের অসুখ করলে আমার খারাপ লাগবে।’ ‘বৈঠক না করলেও অন্তত এক কাপ চা খেয়ে যাও’ এই আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।

এরপরই মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায় ‘আপনারা যদি বাড়িতে এসে বৈঠক না করেন তাহলে আমায় কেন এত অসম্মান করলেন? আপনারা আমায় অনেক অসম্মান করেছেন। এর আগেও তিনদিন দু’ঘণ্টা করে অপেক্ষা করেছি। এইটুকু তো সম্মান দেবেন।’

এরপরই আলাদা করে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সংবাদ সম্মেলন করে জুনিয়ার চিকিৎসকরা দাবি করেন ‘স্বচ্ছতার জন্য ভিডিওগ্রাফি করতে চেয়েছিলাম। সরকারের ওপরে আমরা বিশ্বাস রাখলাম।

তখনই হঠাৎ করে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এসে বললেন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর সম্ভব নয়। আমরা তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। আমরা আর আলোচনায় বসতে রাজি নই।’

এদিকে শনিবার রাতেই কলকাতা পুলিশের টালা থানার ওসি অভিজিৎ মন্ডলকে গ্রেফতার করে সিবিআই। অভিযোগ, আরজি করের ঘটনায় সমস্ত তথ্য প্রমাণ লোপাট করে দেয়া হয়েছে। সেই কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পাশাপাশি আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ফের হেফাজতে নেয় সিবিআই। সন্দীপ ঘোষ যদিও হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি, মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পাচার, মৃতদেহ পাচারসহ একাধিক অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে আগেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বিচারাধীন বন্দী অবস্থায় আছেন।

নতুন করে ফের তাকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার করা হলো। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিচারকের কাছে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে সিবিআই।

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply