রংপুর ব্যুরো:
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের মৃত্যু পুলিশের গুলিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম। তবে মাথায় ইটপাটকেলের আঘাতে সাঈদের মৃত্যু হয়েছে এমন প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তৎকালীন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে চাপ দিয়েছিল বলেও যমুনা টেলিভিশনকে জানান তিনি।
আবু সাঈদের মৃত্যুর ২ মাস ৮ দিন পর তার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. রাজিবুল ইসলাম উল্লেখ করেন, সাঈদের শরীরজুড়ে ছররা গুলির চিহ্ন ছিল। গুলি ঢুকে তাঁর শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অংশে গর্ত তৈরি করেছিল। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ফলে মৃত্যু হয় তার। তাছাড়া, তার খাদ্যনালি ও ঊরুর রক্তনালিতেও জখমের কারণে রক্তজমাট বেঁধে গিয়েছিল।
এদিকে, গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদের মৃত্যুর পর তার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রেট আহামদ সাদাত ও কোতয়ালী থানার এসআই তরিকুল ইসলাম। তাতে সাঈদের সম্ভাব্য মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা ছিল, মাথায় আঘাতের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়।
পরে আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করছে এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এই সুরতহাল প্রতিবেদন নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। অবশেষে ময়নাতদন্তে উঠে আসে গুলিতেই আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেন, ফরেনসিক টার্মে ছররা গুলি ১০ থেকে ৩০ মিটার দূর থেকে করা হলে সেটাকে আমরা লেথাল বলি। ১০ মিটারের দূর থেকে গুলি করায় তার শরীরের ভেতরের কিছু অঙ্গ ফুটো হয়ে গিয়েছিল। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয় তার। এটি নিসন্দেহে একটি হত্যাকাণ্ড। প্রত্যেকটি বিষয়ের ছবি রয়েছে। আদালতে এ বিষয়ে সবকিছু আরও জোড়ালোভাবে স্পস্ট করব।
তিনি আরও বলেন, তবে আবু সাঈদের মাথার বাঁ দিকেও আঘাতের কারণে রক্তজমাট হয়ে ছিল। সেটি পড়ে গিয়ে বা অন্য কোনও কারণে হতে পারে। তবে এটি মৃত্যুর কারণ নয়। গুলি করা না হলে আবু সাঈদ মারা যেতেন না।
গত ৩০ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপর থেকে বিভিন্নভাবে আমাকে চাপ দেয়া হচ্ছিল। দেশের অবস্থা টালমাটাল ছিল। সরকারও খুব এগ্রেসিভ ছিল। বার বার চাপ দেয়া হচ্ছিল যাতে আমি তাদের মতো করে প্রতিবেদন দেই।
ডা. মো. রাজিবুল ইসলাম আরও বলেন, সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনটি না বুঝে অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন। সেখানে বলা হচ্ছে হেড ইনজুড়িতে সাঈদ মারা গেছে। আসলে বিষয়টি সঠিক নয়। হেড ইনজুড়িতে কেউ মারা গেলে আমরা ইন্টার ক্রিডিয়াল হোমোরেজ অথবা ব্রণফ্যাচার লিখে থাকি। সাঈদের ক্ষেত্রে এই দুটির কোনটিই নেই। আমি উল্লেখও করিনি।
অপরদিকে, আবু সাঈদের সুরতরহাল প্রতিবেদনে তথ্য গোপন করায় জড়িত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও এসআইকে ২০১ ধারায় মামলায় নথিভূক্ত করে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন এই মামলার প্যানেল আইনজীবীরা। তাছাড়া, বিশেষ ট্রাইবুন্যালে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি করেন তারা।
প্রসঙ্গত, সাঈদ হত্যার ঘটনায় পুলিশের সাবেক আইজিপি, সাবেক ডিআইজি, সাবেক কমিশনারসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত শতাধিক আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন তার বড়ভাই রমজান আলী। সাঈদের মৃত্যুর পরের দিন পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা করে। সেখানে ইটপাটকেলে সাঈদ নিহত হওয়ার দাবি করে পুলিশ। এই দুটি মামলারই তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
/আরএইচ
Leave a reply