১৫ নভেম্বর তামিলনাড়ুতে আছড়ে পড়েছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘গাজা’। তার তিন দিন আগে ঋতুমতী হন তাঞ্জাভুর জেলার আনাইকাড্ডু গ্রামের বারো বছরের কিশোরী বিজয়া। কিন্তু ওখানকার সমাজের নিয়ম, ঋতুমতী হলে প্রথম কয়েকটা দিন ঘরে থাকতে পারবে না কোনো কিশোরী। তাই ঋতুমতী হওয়ার পর থেকে কয়েক দিন তাঁর ঠাঁই হয়েছিল বাড়ির পাশে খড়ের শস্যগোলায়। সেটাই কাল হল। ‘গাজা’ আছড়ে পড়ার পরেই সেই শস্যগোলায় পড়ল আস্ত একটা নারকেল গাছ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরীর।
‘গাজা’ আছড়ে পড়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে আবহাওয়া দফতর সতর্কবার্তা জানিয়ে বলে দেয়, কোনো ভাবেই খড়ের বা টিনের চালের ঘরে থাকা যাবে না। এমন মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়েও নিয়ে যায় স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু বিজয়াদের বাড়িতে শস্যগোলা ছাড়াও আস্ত একটা পাকা বাড়ি ছিল। শুধু প্রাচীন কালের ধ্যানধারণার জন্যই মৃত্যু হল ওই কিশোরীর।
ঘটনার সময়ে ওই কিশোরীর পাশেই ঘুমোচ্ছিলেন তার মা-ও। তিনি গুরুতর আহত হন। পুদুকোট্টাই হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে।
কিশোরীর মৃত্যুর জন্য দায়ী যে প্রাচীন কালের নিয়মই সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পুদুকোট্টাইয়ের ডিএসপি গণেশমূর্তি। তিনি বলেন, “তামিলনাড়ুর এই অংশে এই নিয়ম পালন করা হয়। কোনো মেয়ে যদি প্রথম বারের জন্য ঋতুমতী হয়, তখন তার পরিবার তাকে বাড়ির বাইরে অন্য একটি জায়গায় থাকতে বলে। প্রায় সপ্তাহ খানেক আলাদা থাকার পরে, নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারে ওই কিশোরী। ”সূত্রের খবর, বিজয়াকে অন্তত ১৬ দিন ওই শস্যগোলার ভেতরে থাকতে হত।
এই ঘটনাটি যে মহিলাদের বিরুদ্ধে ঘটে চলা হিংসার একটা ধরন, সে কথাই মনে করিয়ে দেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্তি এক কর্মী কাব্য মেনন।
চাঁচাছোলা ভাষায় তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড় ‘গাজা’র জন্য ওর মৃত্যু হয়নি। ওকে মেরেছে ওর সমাজ। মহিলাদের ওপর সামাজিক হিংসার একটা অন্যতম উদাহরণ এটা।”
উল্লেখ্য, ১৫ নভেম্বর মধ্য রাতে তামিলনাড়ুতে আছড়ে পড়ে ‘গাজা’। ঝড়ে রাজ্য জুড়ে এখনও পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
Leave a reply