সংবাদমাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এআই কম ব্যবহৃত হয়: এমআরডিআই’র প্রতিবেদন

|

প্রযুক্তির এই যুগে প্রায় সব ক্ষেত্রেই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বহুল ব্যবহার রয়েছে। নিজেদের কাজে অনেক সাংবাদিকই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে থাকেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও সংবাদমাধ্যমগুলোর তা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। নিউজরুমের উন্নয়নেও ভুমিকা রাখতে পারে এআই।

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে নিজেদের কাজে সাংবাদিকরা এআই ব্যবহার করলেও নিউজরুমের কার্যক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারের হার এখনো খুব কম। 

বাংলাদেশের ২৫টি সংবাদমাধ্যমের ৫৩ জন সাংবাদিকের উপর পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল এবং ১৩ জন সম্পাদক এবং সংবাদমাধ্যম সিদ্ধান্তগ্রহীতাকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ফোকাস গ্রুপ আলোচনা এবং বিষয় বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নিয়ে করা ‘মিডিয়া মেটামরফোসিস : এআই এবং বাংলাদেশি নিউজরুম ২০২৪’ শীর্ষক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এমআরডিআই) উদ্যোগে ডিজিটালি রাইট-এর সহযোগীতায় এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত এই মূল্যায়নে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের মধ্যে এআই ব্যবহারের ধরণ, নৈতিক চিন্তাভাবনা এবং সংবাদমাধ্যমগুলোতে আরো বেশি এআই ব্যবহারে জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাদি ও ঘাটতির বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) দ্য ডেইলি স্টার অফিসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এর ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

ফলাফলে দেখা যায়, জরিপকৃত সাংবাদিকদের অর্ধেকেরও বেশি (৫১ শতাংশ) তাদের কাজের জন্য এআই ব্যবহার করেছেন, তবে নিউজরুমে আনুষ্ঠানিকভাবে এআই ব্যবহারের হার বেশ কম (২০ শতাংশ) বলে জরিপে পাওয়া গেছে। এআই ব্যবহারকারী সাংবাদিকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় টুল চ্যাটজিপিটি; যার ব্যবহার হার ৭৮ শতাংশ।

এরপর রয়েছে গ্রামারলি (৫২ শতাংশ) এবং গুগল ট্রান্সলেট (৪৪ শতাংশ)। অন্যান্য জনপ্রিয় টুলগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যানভা (৩৭ শতাংশ), গুগল জেমিনি (১৯ শতাংশ), ডাল-ই এবং অ্যাডোবি সেনসেই (প্রতিটি ১৫ শতাংশ), মিডজার্নি, টেবুলাও, ফ্যাক্টমাটা এবং টার্নিটিন (প্রতিটি ৭ শতাংশ)। এছাড়া অন্যান্য টুলসগুলো ব্যবহার করেছেন ১১ শতাংশ সাংবাদিক। 

ব্যাকরণ ও লেখার ধরণ উন্নত করার জন্য বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো সমন্বিতভাবে এআই ব্যবহার করছে সবচেয়ে বেশি (৫২ শতাংশ)। এর পাশাপাশি গবেষণা ও ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ে এআই ব্যবহারের হার ৪৮ শতাংশ।

এই সমীক্ষায় দেখা যায়, এআই ব্যবহারের ফলে সাংবাদিকদের মধ্যে চাকরি হারানোর আশঙ্কা মাঝারি, তবে অতিরিক্ত নির্ভরতা সমালোচনামূলক চিন্তাধারার উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং কন্টেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা কমাতে পারে বলে চিন্তা রয়েছে। 

সাংবাদিকরা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের প্রতি বিশেষ করে এআইকে একটি হুমকি হিসেবে দেখেন; যা তাদের উদ্ভাবনের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বলে ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় উঠে এসেছে। এছাড়াও বিষয়সংস্লিষ্ট ধারনার অভাব, প্রক্রিয়ার পরিবর্তে ফলাফলের দিকে মনোযোগ, এআইকে কিভাবে কর্মপ্রবাহে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে ও এসংক্রান্ত নির্দেশিকার বিষয়ে বোঝার ঘাটতি এবং ভুল করার ভয় যা উদ্ভাবনের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখে- এই বিষয়গুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখানো হয়েছে।  

তবে বেশিরভাগ সাংবাদিক এআই’র নৈতিক সচেতনতার বিষয়ে অসচেতন বলে প্রকাশ পেয়েছে এই সমীক্ষায়। এআই ব্যবহার সংক্রান্ত নৈতিকতার বড় বাঁধাগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহায়তার অভাব (৮৫ শতাংশ), এআই সম্পর্কে ধারণার অভাব (৭৪ শতাংশ), বাজেট সীমাবদ্ধতা (৪৭ শতাংশ) এবং স্পষ্ট নৈতিক নির্দেশিকার অভাব (৪৫ শতাংশ)।

এআই নিউজরুমের উন্নয়নের জন্য বড় ভূমিকা পালন করতে পারে জানিয়ে গাইডলাইন প্রণয়ন, স্বচ্ছ এআই ডিসক্লোজার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার আয়োজন এবং সাংবাদিকতা শিক্ষাকে আধুনিকায়নের সুপারিশ উঠে এসেছে সমীক্ষাটিতে। 

/এএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply