মানুষের পেশার কত রকমফের আছে। তাই বলে জল্লাদগিরি করে জীবিকা নির্বাহ! শুনতে যতই বেখাপ্পা লাগুক না কেন পাকিস্তানের একটি পরিবারের ক্ষেত্রে এইটাই সত্য। বংশ পরম্পরায় এই পরিবারের পুরুষেরা দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আসছেন।
সাধারণত ফাঁসি কার্যকরে দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য কোনো আসামিকে ব্যবহার করা হয়। এমন রেওয়াজই বিভিন্ন দেশে প্রচলিত। কিন্তু পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ অনেকটা ব্যতিক্রম। সেখানকার বিভিন্ন কারাগারের বেশিরভাগ ফাঁসি কার্যকর করেন মাসিহ পরিবারের সদস্যরা।
লাহোরের ওই পরিবারের বর্তমান পেশাদার জল্লাদ হলেন সাবির মাসিহ। তার বাবা সাদিক মাসিহ এ পেশায় ছিলেন ৪০ বছর। ২০০০ সালে তিনি অবসরে যান। সাবিরের দাদাও ছিলেন জল্লাদ। একাধিক চাচাও একই কাজ করতেন। জেল থেকে জেলে ঘুরে বেড়াতেন এই জল্লাদ পরিবারের পুরুষরা। আর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ নিশ্চিত করতেন। ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসি দেন তারা মাসিহ। তিনি সাবিরের চাচা। সাবিরের বাবা সাদিক ছিলেন ভুট্টোর ফাঁসি কার্যকরের দায়িত্বপ্রাপ্ত। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি এ ক্ষেত্রে জানানোয় ডাকা হয় তারা মাসিহকে।
মাসিহ পরিবার পাকিস্তানে বেশ পরিচিত তাদের অদ্ভুত পারিবারিক ঐতিহ্যের জন্য। সাবির মাসিহকে ‘মালাকুল মউত’ বা যমদূত বলে ডাকেন পাকিস্তানিরা। ২০০৬ সালে ক্যারিয়ার শুরুর পর এ পর্যন্ত আড়াইশোর বেশি দণ্ডিতকে ঝুঁলিয়েছেন তিনি। আল জাজিরা’কে সাবির বলেন, প্রথম আট মাসেই ‘সেঞ্চুরি করি আমি’। সে সময় দৈনিক ভিত্তিতে ডাক পড়তো তার। প্রতিটা দণ্ড কার্যকরের জন্য পান ৫০০ পাকিস্তানী রুপি।
তবে ২০০৮ সালে পাকিস্তানে বেনজির ভূট্টোর দল ক্ষমতায় এসে ফাঁসির দণ্ড সাময়িকভাবে স্থগিত রাখায় সাবিরের কাজের যাচ্ছিল। ‘কাজ’ পাচ্ছিলেন কয়েক বছর ধরে। কিন্তু ২০১৪ সালে তালেবানরা একটি স্কুলে হামলা করে দেড়শোর বেশি শিশুকে হত্যা করলে পাকিস্তান সরকার ফাঁসির দণ্ড ফিরিয়ে আনে। মূলত জঙ্গিগোষ্ঠি ও অন্যান্য অপরাধীদেরকে কড়া বার্তা দেয়ার জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর গত তিন বছরে ৪৭১ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছে পাক সরকার। এর মধ্যে একটা বড় অংশ কার্যকরে ছিলেন সাবির।
এত মানুষকে ফাঁসি দিলেন নিজের হাতে। এ কাজটি করতে কেমন লাগে তার? জবাবে সাবির খুবই উদাসীন। ‘এটা এমন কিছুই না। অন্যান্য কাজের মতোই একটা কাজ।’ তিনি বলেন, ‘ওরা মানুষ খুন করেছিল তাদের ইচ্ছায়। কিন্তু আমি নিজের ইচ্ছায় খুন করি না। আইন মেনে ও রাষ্ট্রের ইচ্ছায় আমি মানুষ খুন করি।’
Leave a reply