তিনি দুর্নীতি করেন, এবং বুক ফুলিয়ে সেটা ঘোষণাও দেন! এমন সদম্ভ আচরণ করেও পার পাওয়ার জন্য ব্যবহার করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও তার পরিবারের নাম। সবাইকে বলে বেড়ান তিনি রাষ্ট্রপতির ভাগ্নে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনে এই পরিচয় দিয়েই করে যাচ্ছেন, কায়েম করেছেন স্বেচ্ছাচার।
কিন্তু বাস্তবে যে তিনি রাষ্ট্রপতির আত্মীয় নন, সে খবর আর কয়জন নেয়। সম্প্রতি তার দুর্নীতি এবং ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা পরিচয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে যমুনা টেলিভিশন। এই ব্যক্তিটি হলেন কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শামসুর রহমান।
যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের দৃষ্টিতে পড়ার পর আসল খবর বেরিয়ে এলো। আজ রোববার বঙ্গভবন থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শামসুর রহমান রাষ্ট্রপতির কোনো ধরনের আত্মীয় নন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীনের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর শামসুর রহমানের দুর্নীতির বিষয়ে সম্প্রতি যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
প্রতিবেদনের একাংশে প্রতিবেদক প্রফেসর শামসুর রহমানের প্রসঙ্গে বলেন, “নিজেকে রাষ্ট্রপতির ভাগিনা পরিচয় দেয়া এ শিক্ষকের দাবি অচিরেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে যাচ্ছে…”, এবং ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য এসময় নিজেকের ‘তাঁর ভাগ্নে’ পরিচয় দিয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য, প্রফেসর শামসুর রহমান রাষ্ট্রপতির কোনো আত্মীয় নন। এছাড়া ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিছু অসুাধু ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা নেয়ার অপচেষ্টা করছেন। এসব ক্ষেত্রে কেউ রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য পরিচয় দিলে বিষয়টি নিশ্চিত হতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, টেলিফোন সম্বর: ০২৯৫৬৬২৩৩ বা রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব, টেলিফোন নম্বর: ০২৯৫৬৬৫৯৪ বরাবর যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হলো।”
যমুনা টিভির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়োগ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঘুষ নিচ্ছেন শামসুর রহমান। আবার কোনো বেতন ছাড়াই মাষ্টাররোলে কাজ করাচ্ছেন বেশ কয়েকজনকে। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিয়মিতই করছেন রদবদল।
এসব বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ দেখালে যমুনা নিউজকে ভারপ্রাপ্ত ভিসি এ এম এম শামসুর রহমান বলেন, চাকরি দিতে না পারলে টাকা ফেরত দিয়ে দিবেন তিনি।
ত্রিশালের নামাপারা গ্রামের যুবক হারুন অর রশিদ। তার অভিযোগ কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাষ্টাররোলে চাকরি দেয়ার নাম করে আট লাখ টাকা নিয়েছে ভারপ্রাপ্ত ভিসি শামসুর রহমান। দুই কাঠা জমি বিক্রি করে টাকার যোগান দিয়েছেন তিনি। তার মতো টাকা দিয়েছে গ্রামের আরো কয়েক যুবক। ত্রিশালের ওমর ফারুখ আখন্দ জানান, চাকরি না পেয়ে টাকা ফেরত চেয়েছেন তিনি। তবে এখনো ফেরত পাননি।
গত দশ আগষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ায় অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম ভিসির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। এর পর ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব নেন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এ এম এম শামসুর রহমান। শিক্ষকদের অভিযোগ ট্রেজারার শামসুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি হয়ে বেআইনিভাবে প্রশাসনে ব্যাপক রদবলদ করেছেন। ঘুষ নিয়ে চাকরি দেয়ার কাজে শিক্ষকদের জড়ানোর চেষ্টাও করছেন তিনি।
নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রুহুল আমীন জানান মাষ্টাররোলে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার বিষয়ে তার সহযোগীতা চান শামসুর রহমান। তিনি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের সময় ঘুষের টাকা লেনদেনের কথোপকথনের একটি রেকর্ড আসে যমুনা নিউজের হাতে। বিষয়টি সরাসরি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের নজরে আনা হয়। কথোপকথন রেকর্ডের সত্যতা স্বীকার করেন তিনি। বলেন, যদি কেউ দাবি করে তাহলে টাকা দিয়ে দেয়া হবে। চাকরি যখন দিতে পারলাম না, নে টাকা ফেরত নিয়ে যা কৃষিকাজ বা একটা কিছু করে খা।
মাষ্টাররোলে চাকরির আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন বিনা বেতনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করাচ্ছেন এমন অভিযোগও স্বীকার করেন তিনি। বলেন, এটা কোনো বিষয় না, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই নিয়োগ বাণিজ্য হয়। বলছি চাকরি হইলে বেতন পাবি, না হইলি পাবি না। এখন কাজ করতে থাক আমি পূর্ণাঙ্গ ভিসি হলে নিয়োগ দিয়ে দিবো।
ভারপ্রাপ্ত এই উপাচার্যের দাবি, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অচিরেই নিয়োগ পাচ্ছেন তিনি।
Leave a reply