ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলার ঘটনায় শোকে মূহ্যমান নিউজিল্যান্ডবাসী। শুক্রবার শ্বেতাঙ্গ জাতীয়বাদী সন্ত্রাসী ব্রেন্টন টারান্টের হামলায় ৪৯ জন মুসল্লী প্রাণ হারান। হামলার পর থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডর্ন যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও অভিবাসীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছেন তা এখন প্রশংসিত হচ্ছে।
মূল হামলকারী ব্রেন্টেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। সেই দেশেরই অন্যতম শীর্ষ পত্রিকা সিডনি মর্নিং হেরাল্ড আজ শনিবার একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে “Jacinda Ardern shines on New Zealand’s darkest day”. অর্থাৎ, নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের কালো দিবসে ঔজ্বল্য ছড়ালেন জেসিন্ডা আর্ডর্ন।
পত্রিকাটি লিখেছে, নিজের নয় বছর বয়সী শিশু সন্তানকে ঘরে রেখে নিজে রাতভর নির্ঘুম কাটিয়েছেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী নারী সরকারপ্রধান।
এত বড় ভয়াবহ হামলার খবর পাওয়ার পর থেকে ৩৮ বছর বয়সী এই নারী নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন। প্রথমেই সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে হামলার ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিদেশি সংবাদমাধ্যমে তার এই অবস্থানের কথা নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছে।
কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের সরকার নন-মুসলিম ব্যক্তির দ্বারা সংগঠিত হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ বলতে দ্বিধা করেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হামলাকারীদেরকে ‘মানসিক রোগী’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু জেসিন্ডা ছিলেন ব্যতিক্রম।
এরপর শনিবার সকালেই আবার ঘোষণা দিয়েছেন, খুব শিগগিরই নিজের দেশের বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে কড়াকড়ি আরোপ করবেন। তার ভাষায়, ‘আমি আপনাদেরকে বলছি, আমার বন্দুক বিষয়ক আইন বদলে ফেলবো।’
শনিবার দুপুরেই ক্রাইস্টচার্চের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জেসিন্ডা। সেখানে স্বজন হারানো শোকাহত মুসলিম কমিউনিটির সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এসময় তার গায়ে ছিল কালো গাউন আর মাথায় ছিল একটি কালো স্কার্ফ। হামলাকারী সন্ত্রাসী তার মেনিফেস্টোতে মুসলিম ও অভিবাসীদের প্রতি তার চরম বিদ্বেষের কথা উল্লেখ করেছে। শোকাহত মুসলমানদের দেখতে যাওয়ার আগে মুসলিম নারীদের মতো মাথায় স্কার্ফ ব্যবহারকে উগ্রপন্থীদের প্রতি বার্তা হিসেবে দেখছেন অনেকে।
স্বজনদের এক সমাবেশে বক্তব্যও দেন নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা প্রাণ হারিয়েছেন তারা এই নিউজিল্যান্ডকে কল্পনাও করেননি। আমরাও যেই নিউজিল্যান্ডকে চিনি এটা সেই নিউজিল্যান্ড নয়। যারা মারা গেছেন তারা আসলে আমরাই। অনেক অভিবাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নিউজিল্যান্ড তাদেরও ঘর।’
“সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানাচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে? জবাবে জেসিন্ডা বলেছেন, “(বিশ্বজুড়ে) সব মুসলিম কমিউনিটির জন্য সহমর্মিতা ও ভালোবাসা।”
Leave a reply