গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে মৃত সাবেক এক সেনা সদস্যের মরদেহ সনাতন কিংবা মুসলিম ধর্মানুযায়ী দাফন না সৎকার হবে এ নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। লাশ নিয়ে দুই স্ত্রী পরিবারের সদস্যের মধ্যে চলে টানাহেঁচড়া। অবশেষ ইউএনও, থানা পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে দিনভর দফায়-দফায় বৈঠক শেষে লাশ দ্বিতীয় স্ত্রীকে দেয়া হয়। পরে মুসলিম ধর্মানুযায়ী জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় স্ত্রী রুনা লায়লায় রংপুরের গঙ্গাচড়া গ্রামের বাড়ির কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
রবিবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেজবাউল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু বকর প্রধান, দায়িত্বপ্রাপ্ত থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মতিউর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু, দুই স্ত্রীসহ উভয়পক্ষের লোকজন নিয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়।
এরআগে, শারীরিক অসুস্থ্যজনিত কারণে চিকিৎসার জন্য বগুড়া সিএমএইচএ হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেয়ার পথে রবিবার রাতে মারা যান তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কিশোরগাড়ী গ্রামের রবি দাস পরিবারের তিলক চন্দ্র রবিদাসের ছেলে দীলিপ চন্দ্র রবিদাস ওরফে আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি সাবেক সেনা সদস্য। জীবদ্দশায় সনাতন ধর্মাবলম্বী রবিদাস পরিবারে জন্ম নিলেও ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। দীলিপ রবিদাস থেকে তিনি আবু বক্কর সিদ্দিক হন। বাবার সংসারে থেকে লেখাপড়া শেষে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। চাকুরী করাকালীন দীলিপ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফতুল্লাপুর এলাকার অর্জুন চন্দ্র রবিদাস ওরফে গবরা চন্দ্র রবিদাসের মেয়ে রাজবসিয়া রানীকে বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। সংসার জীবনে দিলীপ ও রাজ বসিয়া রানীর ঘরে ২ মেয়ে-২ ছেলেসহ ৪ সন্তানের জন্ম হয়।
তারা আরও জানায়, দিলীপ চন্দ্র বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনা ক্যাম্পে দীর্ঘদিন কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। ইরাক ও কুয়েত যুদ্ধের সময় সেনা মিশনে বিদেশ যাবার আগে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম রাখেন আবু বক্কর। এরপর বক্কর সেনা টীমের সাথে বিদেশ মিশনে যান।
সেখান থেকে ফিরে আবু বক্কর সিদ্দিক রংপুর জেলা সদরের বাহাদুরপুর গ্রামের আ. রাজ্জাকের মেয়ে রুনা লায়লাকে ২য় বিয়ে করে বগুড়ার জাহাঙ্গীররবাদ এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্থায়ী হিসেবে বসবাস করতে থাকেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে ৪ সন্তান থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ২১ বছর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করলেও কোন সন্তান জন্ম নেয়নি। এসময় আবু বক্কর সিদ্দিক পরপর ৩ বার পবিত্র ওমরা হজ্জ্ব’ও পালন করেন। বিগত ২০০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
শারীরিক অসুস্থ্যজনিত কারণে চিকিৎসার জন্য গত কয়েকদিন আগে তাকে বগুড়া সিএমএইচএ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার রাতে এ্যাম্বুলেন্স যোগে বগুড়া থেকে ঢাকা নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। সোমবার সকালে পলাশবাড়ীর কিশোরগাড়ী গ্রামের পৈত্রিক ভিটায় তার মরদেহ নিয়ে আসেন স্বজনরা।
পলাশবাড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মতিউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তার মৃত্যুর খবরে দাফন বা সৎকার নিয়ে পরিবারের সদস্যের মধ্যে নানা বিভ্রান্তিসহ সৃষ্টি হয় জটিলতা। অবশেষে দিনভর জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিকের লাশ দ্বিতীয় স্ত্রী রুনা লায়লার জিম্মায় বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরে তিনি তার স্বামীর মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ী রংপুরের গঙ্গাচড়ায় চলে যান। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয় বলেও জানান তিনি।
Leave a reply