রাজধানীতে সন্তানের খাবার জোগাড় করার জন্য এক অসহায় বাবার অনৈতিক কাজের আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর ঘটনা উঠে আসে গণমাধ্যম এর পর্দায়।
ঘটনার পর সেই বাবা প্রথম কথা বলেছিলেন যমুনা টেলিভিশনের সাথে। তবে সামাজিক মর্যাদাহানির ভয়ে তখন ক্যামেরার সামনে আসতে চাননি তিনি।
যমুনা টেলিভিশনকে তিনি জানিয়েছিলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান তাকে চাকরি দিতে চাচ্ছে, ভয়ে তাদের সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া সেই পুলিশ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ হচ্ছে তার।
রবিবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় এসে, আবারো কথা বলেন যমুনা টেলিভিশনের সাথে। সেসময় খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে সুপার শপ স্বপ্ন’র হেড অব মার্কেটিং তানিম করিম তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন।
সেই বাবার সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি মাথায় রেখেই স্পর্শ কাতর সেই সংবাদ প্রচার করে যমুনা টেলিভিশন। টেলিভিশনটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই সংবাদ শেয়ারও করা হয়।
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা সেই সংবাদের কমেন্ট বক্সে দর্শকরা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেন সেই সংবাদের নানান বিষয় নিয়ে।
হারুনুর রশিদ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এটিকে সুপার শপ স্বপ্নের সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি লিখেছেন, কিছুদিন আগে স্বপ্নকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল পচা বাসি খাবার বিক্রির দায়ে। তার ধারণা, কাস্টমার বাড়ানোর জন্য চুরির নাটক সাজিয়ে আবার সেই চোরকে চাকুরী দিয়ে সবার কাছে মহান সাজার চেষ্টা করছে স্বপ্ন।
তবে হারুনুর রশিদের এই প্রশ্নের উত্তর রাকিবা আক্তার নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী দিয়ে দিয়েছেন। সবকিছুতে নেগেটিভ চিন্তা না করে পজিটিভ চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন হারুনুর রশিদকে।
গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এসব প্রশ্ন আমাদের কাছেও ঘুরপাক খায়। এ ধরনের ঘটনা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, সেটার যৌক্তিকতা খোঁজার চেষ্টা তাই আমরা প্রথমে করি।
ঘটনাটি জানার পর প্রথম দেখা করি রাজধানীর খিলগাঁও থানার পুলিশ সদস্যদের সাথে। তাদের ভাষায় “স্যার (সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলাম) ইফতারের পর অফিসে এসে কিছুক্ষণ পর টহল পর্যবেক্ষণ করার জন্য বের হয়েছিলেন। রাস্তায় জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন”।
“গল্পের ছলে বলা পুলিশ সদস্যদের এই উক্তির কারনেই আমার কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে ঘটনাটি সাজানো নয়”।
ইমরান হোসেন আরিফ নামে আরেকজন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী লিখেছেন, “কিছুদিন আগে আমেরিকান পুলিশদের এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল। এই পুলিশ সদস্য সেটি দেখে প্রশংসা পাবার লোভে নাটক সাজিয়েছেন”। অবশ্য মিস্টার আপেল মাহমুদ নামে আরেকজন ব্যবহারকারী সেই মন্তব্যের অবজ্ঞাসূচক জবাবও দিয়েছেন।
এ ঘটনা প্রথম যে পুলিশ কর্মকর্তার নজরে আসে, যার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সারাদেশে ভাইরাল হয় ঘটনাটি, ইমরান হোসেন আরিফ এর মত যারা যারা মন্তব্য করেছেন তাদের সব মন্তব্য নজরে এসেছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার।
পরে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা এসব নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে বিব্রত হয়েছেন বলে জানান। তার ভাষায় “আমি যখন তার চোখে পানি দেখি যখন শুনি তার সন্তানের কথা তখন আসলে আমার অন্য কিছুই মনে হয়নি, সবার আগে আমার নিজের সন্তানের কথাটি মনে এসেছে। পরে সে ঘটনা আমার ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলে শেয়ার করি তবে সেটি কোন রকম প্রচারের জন্য কিংবা বাহবা কুড়ানোর জন্য নয়। ফেসবুকে সেই ঘটনা স্ট্যাটাস দিলে সেটি তে ভাইরাল হবে সেটিও চিন্তা করিনি কিংবা কেউ যে তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে সেটি ও আমার মাথায় আসেনি। নিজের মানবিকতার জায়গা থেকেই তা ফেসবুক বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি”।
তবে এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যমুনা টেলিভিশনের ওই প্রতিবেদনের বিচিত্র সব মন্তব্য আসে। হাবিবুর রহমান নামে আরেকজন লিখেছেন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা নিয়মিত বেতন পান না আবার অনেকেই আছে যাদের চাকরি ও নেই। তাহলে কি তারা সবাই চুরি করা শুরু করবে? কারণ চুরিতেই তো ভাগ্য খুলে!
বেলাল হোসেন নামে আরেকজন লিখেছেন, “কতশত বাবা আছে যাদের সন্তানদের দুবেলা খাবার দিতে পারেন না, তাদের জন্য কি করলেন”?
যেহেতু এসব মন্তব্য ফেসবুক ব্যবহারকারীরা স্বপ্রনোদিত হয়ে উন্মুক্ত ভাবে করেছেন তাই তাদের অনুমতি ছাড়াই তা প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে ওই সংবাদ প্রকাশ এর পর অনেকেই আমাকে টেলিফোনে অথবা মেসেজ এর মাধ্যমে তাদের মন্তব্য জানিয়েছেন। তেমন একজন লিখেছেন, ভাগ্য জোরেই চাকরিটা পেয়েছেন সেই বাবা। কারন ঐ ঘটনার সময় যদি পুলিশ দেরিতে পৌঁছাতো কিম্বা পুলিশ কর্মকর্তা তাকে সাধারণ চোর ভেবে আটক করতো তাহলে হয়তো ঘটনা আর দশটা নির্মম ঘটনার মতো আড়ালেই থেকে যেতো।
Leave a reply