মুশফিকুর রহিম এবং লিটন দাসের লড়াইয়ের পরও পরাজয় এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ৩৬০ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৯৫ রানে হেরে যায় মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বাধীন দলটি।
মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের কার্ডিফে অনুষ্ঠিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ৩৫৯ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। টার্গেট তাড়া করতে ৪৯.৩ ওভারে ২৬৪ রানে অলআউট বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৯০ রান করেন মুশফিকুর রহিম। এছাড়া ৭৩ রান করেন লিটন দাস।
৩৬০ রানের পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে বাংলাদেশ। উদ্বোধনীতে ৪৯ রান করার পর দুই বলের ব্যবধানে নেই সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসানের উইকেট। ২৯ বলে ২৫ রান করেন সৌম্য। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যজশপ্রীতি বুমরাহর বলে বোল্ড সাকিব।
৪৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে তারা ১১০ রানের জুটি গড়েন। এই জুটিতে জোড়া ফিফটি গড়েন লিটন ও মুশফিক।
ওপেনিংয়ে নেমে শুরু থেকেই অসাধারণ ব্যাটিং করেন লিটন। ফিফটির পর সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন এ ওপেনার। কিন্তু যুজবেন্দ্র চাহালের লেগ স্পিনে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তিনি। তার আগে ৯০ বলে ১০টি চারের সাহায্যে ৭৩ রান করেন লিটন।
লিটন আউট হওয়ার পর উইকেটের পরিস্থিতি বুঝে ওঠার আগেই বিপদে পড়েন মোহাম্মদ মিঠুন। ঠিক পরের বলেই এলবিডব্লিউ হন এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। যুজবেন্দ্র চাহালের কারণে রানের খাতা খোলা হয়নি মিঠুনের।
এরপর ছয় নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কুলদীপ যাদবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ৫ উইকেটে ২১৬ রান করা বাংলাদেশ এরপর শূন্য রানের ব্যবধানে হারায় ৩ ব্যাটসম্যানকে।
দুর্ভাগ্যই বলতে হয়। ইনিংসের শুরু থেকে অসাধারণ ব্যাটিং করেও সেঞ্চুরি মিস করেন মুশফিকুর রহিম। মাত্র ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। কুলদীপ যাদবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মুশফিক। সাজঘরে ফেরার আগে ৯৪ বলে ৮টি চার ও দুটি ছক্কায় ৯০ রান করেন।
মুশফিক আউটের পর দ্রুত বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও সাব্বির রহমান রুম্মন। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে আউট হন সৈকত। রবিন্দ্র জাদেজার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাব্বির।
ইনিংসের শেষ দিকে ২৫ বলে ১৮ রান করে আউট হন সাইফউদ্দিন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রান আউট হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেমে যায় ২৬৪ রানে।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে লোকেশ রাহুল ও মহেন্দ্র সিং ধোনির জোড়া সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৫৯ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। দলের পক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকান লোকেশ রাহুল (১০৮) ও মহেন্দ্র সিং ধোনি (১১৩)।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতীয় দলকে শুরুতেই চেপে ধরেন মোস্তাফিজুর রহমান। দলীয় মাত্র ৫ রানেই ভারতীয় উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন কাটার মাস্টার।
এরপর বিরাট কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন অন্য ওপেনার রোহিত শর্মা। রোহিত ও বিরাট কোহলির মধ্যকার জুটি ভাঙা খুবই প্রয়োজন ছিল। ধীরে ধীরে উইকেটে সেট হয়ে আক্রমণাত্মক হচ্ছিলেন তারা। আর সেই মুহূর্তে রোহিত শর্মাকে বোল্ড করার মধ্য দিয়ে জুটির বিচ্ছেদ ঘটান রুবেল হোসেন।
জাতীয় দলের তারকা পেসার রুবেল ১৪তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই নিজের দ্বিতীয় বলে রোহিতের স্ট্যাম্প ভেঙে দেন। সাজঘরে ফেরার আগে ৪২ বলে মাত্র ১৯ রান করার সুযোগ পান ভারতের বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ওপেনার রোহিত। দলীয় ৫০ রানে দুই উইকেট হারায় ভারত।
শুধু ভারতই নয়, বর্তমান সময়ের বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। ভারতের এই অধিনায়ককে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ফিফটির পথেই ছিলেন কোহলি। ৪৬ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৪৬ রান করা কোহলি বিভ্রান্ত হন সাইফউদ্দিনের বলে। কোহলির বিদায়ের মধ্য দিয়ে ৮৩ রানে ৩ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারায় ভারত।
রুবেল হোসেনের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হয়ে সাজঘরে ফেরেন বিজয় শঙ্কর। রুবেলের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন বিজয়।
১০২ রানে ৪ উইকেট পতনের পর ভারতের ইনিংস মেরামত করেন লোকেশ রাহুল ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। পঞ্চম উইকেটে তারা ১৬৪ রানের জুটি গড়েন। এই জুটিতে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রাহুল। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি করা রাহুলকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান সাব্বির রহমান রুম্মন। তার আগে ৯৯ বলে ১২টি চার ও ৯টি ছক্কায় ১০৮ রান করেন রাহুল।
ইনিংসের শেষ দিকে সাত নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকান হার্দিক পান্ডিয়া। ১১ বলে ২১ রান করা পান্ডিয়াকে সাব্বিরের ক্যাচে পরিনত করেন সাকিব আল হাসান।
পান্ডিয়া বিদায় নিলেও ব্যাটিং তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আবু জায়েদ রাহীকে ছক্কা হাঁকানোর মধ্য দিয়ে ৭৩ বলে শতরানের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান ধোনি। ইনিংস শেষ হওয়ার চার বল আগে সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ধোনি। তার আগে ৭৮ বলে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১১৩ রান করেন ধোনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৫০ ওভারে ৩৫৯/৭ (ধোনি ১১৩, রাহুল ১০৮, কোহলি ৪৭; সাকিব ২/৫৮, রুবেল, ২/৬২)।
Leave a reply