দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুরুটা দুর্দান্ত হলেও শেষটি ভালো হয়নি বাংলাদেশ দলের। সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়ে শেষ পাঁচেও স্থান মেলেনি। পয়েন্ট টেবিলের অষ্টমে থেকে ইংল্যান্ড ছাড়তে হয় মাশরাফী বাহিনীকে।
দল ও সমর্থকদের মন না ভরালেও একক পারফরম্যান্স দেখিয়ে দেশি-বিদেশি ভক্ত-সমর্থকদের অন্তরের গভীরে জায়গা করে নিয়েছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। দাবি উঠেছে তাকেই ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট করার।
যদিও ফাইনাল অবধি যে দুটি দল যেতে পারে, সে ম্যাচ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা পারফরমার থেকেই ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার সুযোগটা বেশি থাকে।
তবে এসব মানতে নারাজ বাংলাদেশি সমর্থকরা। সাকিবের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ বিদেশি ক্রিকেটভক্তরাও। বাংলাদেশি সমর্থকদের কথাতেও সায় দিয়েছেন সাবেক তারকারা। ক্রিকেটের নক্ষত্ররাও মাটিতে নেমে এসেছেন সাকিব বন্দনায়।
টুইটারে সাকিবের ভূয়সী প্রশংসা করছেন সাবেক অজি তারকা টম মুডি ও মাইক হাসি। সাকিবের প্রশংসায় ভেসেছেন ইয়ান পন্টও।
মাইক হাসি টুইটারে লিখেছিলেন, ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট সাকিবই হতে পারে।
সে নিয়েই চলছিল সমীকরণ। এ প্রতিযোগিতায় সাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন যারা- রোহিত শর্মা, ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্ক, জো রুট ও জেসন রয়।
অনেকের ধারণা ছিল- দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কারটি বাগিয়ে ফেলতে পারেন ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা। বিশ্বকাপে ৫টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচ খেলে করেছেন সর্বোচ্চ ৬৪৮ রান। সাকিব থেকে মাত্র ৪২ রান বেশি তার। তবে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়ে রোহিতের সিরিজসেরা হওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে।
একই বক্তব্য অসি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের বেলায়ও। গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর নিজের ইনিংসকে আর টেনে নিতে পারছেন না ওয়ার্নার। ১০ ম্যাচ খেলে ৬৪৭ রানেই থামল তার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সংগ্রহ।
সাকিব থেকে এ দুই ব্যাটসম্যানের রান সামান্য বেশি হলেও অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে সাকিবের ধারে কাছেও নেই তারা।
ব্যাট হাতের রোহিত-ওয়ার্নারের মতো ধারাবাহিক সফল সাকিব বল হাতেও কম যাননি। ৮ ইনিংসে শিকার করেছেন ১১ উইকেট।
সে হিসাবে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের দৌড়ে সাকিব থেকে অনেক পিছিয়ে রোহিত-ওয়ার্নার। যাদের নামের পাশে কোনো উইকেট নেই।
সাকিবের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক। ১০ ম্যাচে ২৭ উইকেট পেয়েছেন তিনি। তবে ব্যাট হাতে সাকিবের এক ইনিংসের সমানও নেই তিনি। ৮ ইনিংসে ব্যাট করে করেছেন মাত্র ৬৮ রান।
সে হিসাবে স্টার্কও পিছিয়ে থাকবেন সাকিবের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের কাছে। আর সবচেয়ে বড় কথা এই তিনজনের কেউই দলকে ফাইনালে তুলতে পারেননি।
যে কারণ ক্রিকেট বিশ্লেষকদের চোখ এখন দুই ইংলিশ খেলোয়াড় জো রুট ও জেসন রয়ের দিকে।
সিরিজসেরা পুরস্কারে এখন তাদের সাকিবের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ধরা হচ্ছে। আগামী ১৪ জুলাই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শিরোপার লড়াইয়ে মাঠে নামছে তাদের দল।
৭ ম্যাচে ৬ ইনিংসে ৭১.০০ গড়ে ৪২৬ রান ঝুলিতে নিয়ে সে ম্যাচে নামবে জো রুট। ২ উইকেটও সংগ্রহে রয়েছে তার।
অন্যদিকে জেসন রয় জমা করেছেন ৫৪৯ রান। ফাইনালে নিজেদের সেরাটা দেখিয়ে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে শিরোপার স্বাদ এনে দিতে পারলে সিরিজসেরার দৌড়ে এগিয়ে যাবেন এ দুই ক্রিকেটার।
যদিও এখন পর্যন্ত সাকিব থেকে অনেক পিছিয়ে তারা। চলতি বিশ্বকাপে ৮ ইনিংস ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান করেছেন। ২ সেঞ্চুরির সঙ্গে পেয়েছেন পাঁচটি অর্ধশতক। ৮ ইনিংসে সাকিবের সর্বনিম্ন রান ছিল ৪১। ম্যাচ উইনিং ইনিংসও খেলেছেন তিনি।
বল হাতে তো ১১ উইকেট রয়েছেই তার সংগ্রহে। ফিল্ডিংয়ে সাকিবের ক্ষিপ্রতাও ছিল প্রশংসনীয়। সব মিলিয়ে পুরো আসরে এখনও সাকিবই সেরা। বলতে গেলে সেরাদের সেরা।
সে হিসাবে এবারের বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারটা সাকিবের হাতেই ওঠা উচিত। তবে তিনি আটকে গেছেন একটি জায়গাতেই। তা হলো দলের অবস্থান অষ্টমে।
ক্রিকেটবোদ্ধাদের মতে, সিরিজসেরার প্রতিযোগিতায় যেই থাকুক না কেন তারা প্রায় সবাই হয় ব্যাটিং নয়তো বোলিংয়ে ভালো করেছেন। সাকিবের মতো কেউই ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগে সমান পারদর্শিতা দেখাননি।
Leave a reply