মানজুর মোরশেদ:
ক্রীড়া ইতিহাসে জননন্দিত সেরা ৬টি ফাইনালের খোঁজে বেরুলে তর্ক-বিতর্ক পিছু ছাড়বে না নিশ্চিত! সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে যুক্তি-তর্কের মেলায় হয়ত হারিয়ে যাবেন আপনি। কিন্তু, তারপরও চেষ্টা করলে সেখানে কি জায়গা হতে পারে লর্ডসের বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালের? ক্রীড়া পাগল মানুষের মুখে-মুখে ফেরে এমন ৬টি ফাইনালের ৩টিতেই রয়েছে ইংল্যান্ডের শিরোপা জয়, যার সবশেষটি ওই লর্ডসের ফাইনাল জয়।
১৯৬৬ ফুটবল বিশ্বকাপ: ৩০ জুলাই বিশ্বকাপের ফাইনাল বসে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির মুখোমুখি হয় ফুটবলের আদিভূমি ইংল্যান্ড। ১০ নাম্বার জিওফ হার্স্টের হ্যাটট্রিকে ৪-২ গোলে শিরোপা জেতেন ববি চার্লটন-গর্ডন ব্যাঙ্কসরা। বিশ্বকাপ ফাইনালে আজও যা একমাত্র হ্যাটট্রিক। যদিও মাঝের গোলটি বল গোললাইন অতিক্রম করেছিল কি না, সেই বিতর্ক আজও চলমান ফুটবল রসিকদের টেবিলে। ট্রাফালগার স্কয়ারের ঝর্নার পাশে সেদিন ববি মূরের দল উৎসব করেছিল ফাইনাল জয়ের।
র্যাম্বল ইন দ্যা জাঙ্গল: তৎকালীন জায়ার আর এখনকার কঙ্গো, আফ্রিকান দেশটির শহর কিনশাশায় ১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব দেখেছিল মোহাম্মদ আলী আর জর্জ ফোরম্যানের সেই ঐতিহাসিক বক্সিং লড়াই। সর্বকালের সেরা অ্যাথলেট আলী কিন্তু বাউটের আগে ফেবারিট ছিলেন না! অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা ফোরম্যানের কোচিং স্টাফরাই প্রার্থনা করেছিলেন যেন আলীকে রক্তাক্ত না হতে হয়! অথচ কিসের কী? সেই আলীই ১৫ রাউন্ডের ম্যাচ শেষ করেছিলেন অষ্টম রাউন্ডে, ফোরম্যানকে নকআউট করে। পৃথিবী অবাক তাকিয়ে দেখেছিল মোহাম্মদ আলীর কীর্তি।
২০০৩ রাগবি বিশ্বকাপ: ইংল্যান্ডের একমাত্র রাগবি বিশ্বকাপ জয়ও কম নাটকীয় নয়! এটি কেন শ্রেষ্ঠ ফাইনালের তালিকায়, তাঁর কারণ দেশটি ইংল্যান্ড বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছালে ভুল হবে। সিডনির টেলস্ট্রা স্টেডিয়ামে, চীরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ফাইনালে উপস্থিত ছিল ৮৩ হাজার দর্শক। নির্ধারিত সময়ের শেষ মূর্হুর্তে সমতায় ফেরে অস্ট্রেলিয়া। অতিরিক্ত সময়ের ২৬ সেকেন্ড বাকি থাকতে জনি উইলকিনসন গোল স্কোর করেন, আর অবিশ্বাস্য সেই ফাইনাল জিতে নেয় ইংল্যান্ড।
২০০৫ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল: ইস্তান্বুলের কামাল আতাতুর্ক স্টেডিয়ামে দুর্দমনীয় এসি মিলানের কাছে একটা সময় খড়-কুটোর মত অবস্থা হয়েছিল লিভারপুলের। ৩-০ গোলে এগিয়েছিল এসি মিলান। কিন্তু, দ্বিতীয়ার্ধে ৬ মিনিটের মধ্যে তিন গোল শোধ করে সমতায় ফেরে লিভারপুল। ফাইনালে কামব্যাকের অবিশ্বাস্য সেই রেকর্ড,আজও অমলিন। শেষ পর্যন্ত, টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে শিরোপা ওঠে স্টিভেন জেরার্ডের হাতে। এই ফাইনাল সম্পর্কে দিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছেন ‘১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের বিপক্ষে ও এসি মিলানের বিপক্ষে ৩-০’তে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচে ফেরা সম্ভব ছিল না, যা লিভারপুল করেছে।’
২০০৮ উইম্বলডন ফাইনাল: মুখোমুখি হয় সর্বকালের দুই সেরা টেনিস খেলোয়াড় রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদাল। যে লড়াইটিকে পরে জন ম্যাকেনরো আখ্যায়িত করেন- সর্বকালের সেরা টেনিস ম্যাচ হিসেবে। ৭ ঘন্টার সেই ফাইনালে ২-০’তে পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ফিরে এসেছিলেন রজার ফেদেরার। কিন্তু, শেষ সেট হেরে যান ফেডেক্স! সেন্টার কোর্টে নাম্বার ওয়ানের পরাজয়ে নেমে আসে নীরবতা!
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ: ফাইনালে লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শুধু টাই না! সুপার ওভারেও টাই করে ইংল্যান্ড! নাটক আর স্নায়ুক্ষয়ী টানটান উত্তেজনার ফাইনালে ফল নির্ধারণ হয় ম্যাচের বাউন্ডারির হিসেবে। হয়তবা আইনে বদল আনবে আইসিসি, কিন্তু এমন একটি বিশ্বকাপ ফাইনাল আর কি কখনও আসবে ক্রিকেটের মাঠে? আর এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে ফুটবল, রাগবি ও ক্রিকেট- ৩টি খেলারই বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র দেশ এখন ইংল্যান্ড।
লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন।
Leave a reply